পৃথিবীর যে যেখান লড়ে যায় আমাদের লড়া তারা আজ সব্বাই খানিক্ষণ মুচকি হেসে নেবে। এদের প্রত্যেকের এক একটা ঘামের বিন্দু ঝড়িয়ে হিমা দাস ওদের হয়ে সোনা জিতছে রোজ।
হিমা দাসের মা ও বাবা অসমের নওগাঁ জেলার প্রত্যন্ত ধিং গ্রামের দরিদ্র চাষী। আজ ও গ্রামে ধান চাষ করেন। ফোরজি এসেছে কিন্তু পরিশ্রুত পানীয় জল, পাকা বাড়ি, খাদ্যের সুরক্ষা আসেনি। কমনওয়েলথ এ সোনা জেতার পরে বাড়ির লোককে বোঝাতে আর পারেন না হিমা কত বড় ব্যাপার এটা। তারা কেবল বোঝে সোনা দেওয়া হয়েছে মেয়েকে মানে বড় কিছু করেছে মেয়ে। মানে সংসারের লাভ।
হিমা দাস খালি পায়ে কাদা মাঠে ফুটবল খেলতেন, দৌড়তেন। অনেক অনেকদিন বাদে একটা জুতো পেয়েছিলেন, অনেকটা টাকা জমিয়ে। জুতো কেনার জন্য ও এদিক ওদিকে হাত পাততে হয়েছে। ইংরেজি বলতে পারতেন না বলে অপমানের পর্যায়ে চলে গেছিল হাসি ঠাট্টা। হিমা কিন্তু দৌড়ে গিয়েছেন।
আমরা সবাই সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। একদম নিচুস্তর থেকে উঠে আসা নায়ক বিরাট কিছু হলে প্রবল এড্রিনালিন রাশ হয় আমাদের। নিজেদের সব ব্যার্থতা ওদের Success stories ভুলিয়ে দেয়। আমরা ভারতের সাফল্য গাঁথা যুগ যুগ ধরে মনে রাখি।
হিমা দাস ওইরকম এক গল্প। সিনামার মতো অবিশ্বাস্য গল্প। যার এক পাটি ফুটপাতের জুতো কেনার সামর্থ্য ছিল না, যে নুন ভাত খেয়ে একাধিক দিন প্র্যাক্টিসে গেছে, যে ইংরেজি উচ্চারণ করার চেয়ে দৌড়ে সোনা জেতা অনেক সহজ মনে করে তার নামেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্পোর্টস কোম্পানি Adidas জুতো লঞ্চ করলো। দৌড় বা জগ করার জুতো। নরম, মূল্যবান জুতো। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির উঠোন বা সবচেয়ে উন্নত দেশে পরা হবে এমন জুতো৷
বিশাল জাঁদরেল সব মানুষের মাঝে এক আলোক উজ্জ্বল অনুষ্ঠানে হিমা দাস এডিশন বের করলো এই বনিকেরা। হাজার ওয়াট আলোর ঝলকানিতে এক অনন্য লড়াই এর গল্প।
ওরা লিখেছে, হিমা দাস = আদিদাস নাকি! আদিদাস মানে যারা এক পাটি জুতো অনেক কৃষকের একমাসের উপার্জনের সমান দামে বিক্রি করেন। এক পাটি জুতো ছয় মাসের নুন আর ভাতের দামে বিক্রি করেন।
না ভুল। হিমা দাস = আদিদাস স্রেফ না। হিমা দাস ইজ ইকুয়াল টু ভারতবর্ষ। ইজ ইকুয়াল টু ১৩০ কোটি মানুষ যারা রোজ লড়ে যাচ্ছে একটা গ্রেট ইন্ডিয়ান সাকসেস স্টোরি হবে বলে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত