‘সংসদের বিষয় উপদেষ্টা কমিটি আসলে সময় ধার্য করা কমিটিতে পরিণত হয়েছে।’ প্রায় রোজই কোনও না কোনও বিল পেশ, আলোচনা আর সংখ্যার জোরে তা পাশ করিয়ে নেওয়ার যে ট্রেন্ড শুরু করেছে কেন্দ্র, তার বিরোধীতা করতে গিয়ে এমন কথাই বলছে বিরোধীরা। যার ফলে আগেই ‘প্রায় রোজই কোনও না কোনও বিল পেশ, আলোচনা আর সংখ্যার জোরে তা পাশ করে নেওয়া সংসদের কাজ নয়’- এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল তারা। কিন্তু তারপরও সংসদের বর্তমান অধিবেশনের মেয়াদ আরও দশ দিন বাড়িয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় আরও প্রায় গোটা কুড়ি বিল পাশ করতে চায় মোদী সরকার৷ আর এ নিয়েই চরমে পৌঁছে গেল সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাত৷
বিলগুলিকে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে না পাঠিয়ে সরাসরি পাশ করিয়ে নেওয়ার এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একজোট হয়ে ঠিক করেছে যে, রাজ্যসভায় তারা সব বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাবার দাবি করবে৷ স্ট্যান্ডিং কমিটি এখনও গঠিত হয়নি৷ কিন্তু রাজ্যসভা চাইলে সিলেক্ট কমিটি গঠন করতে পারে৷ আর সিলেক্ট কমিটি গঠনের দাবি যদি মানা না হয়, তা হলে বিরোধীরা বিল পাশ করার প্রক্রিয়াই বয়কট করবে৷ আসলে, রাজ্যসভায় সরকার এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর অবস্থাটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে৷ আগে বিরোধীদের গরিষ্ঠতা ছিল, তখন তাদের দাবির কাছে রাজ্যসভায় সরকারকে নতিস্বীকার করতে হত৷ কিন্তু এখন সংখ্যাটা তাদের দিকে হেলে পড়ায় সরকার চাইছে, তাদের জেদের কাছে বিরোধীরা আত্মসমর্পণ করুক৷
এই বিরোধটা গতকাল তুঙ্গে উঠেছে দুটি বিষয় নিয়ে৷ প্রথমটি সংসদের বর্তমান অধিবেশন আরও দশ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং দ্বিতীয়টি হল, আরও প্রায় গোটা কুড়ি বিল পাশ করার প্রয়াস৷ আর এই দুটি সিদ্ধান্তেরই প্রবল বিরোধ করছে সম্মিলিত বিরোধীরা৷ গতকাল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সংসদের বর্তমান অধিবেশনের মেয়াদ আরও দু সপ্তাহ বাড়ানো হবে৷ এর পাশাপাশি আরও এক প্রবীণ মন্ত্রীও জানিয়েছেন, সংসদের মেয়াদ দু সপ্তাহ বাড়ানো মানে আরও দশটা কাজের দিন পাওয়া যাবে৷ এখনও আরও তিন দিন রয়েছে৷ সব মিলিয়ে তেরো দিন ধরে দিনে একটি থেকে দুটি বিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের৷
মোদী সরকার হঠাৎ কেন এত তেড়েফুড়ে উঠে এতগুলি বিল পাশ করাতে চাইছে? বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার এই বিলগুলিকে আদৌ স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠাতে চায় না৷ কমিটিতে পাঠালেই দেরি হবে৷ তারা বেশ কিছু বদলের সুপারিশ করবে৷ সেগুলি মানার জন্য বিরোধীরা চাপাচাপি করবে৷ সে সবের হাত থেকে মুক্তি পেতেই সরকার এই প্রথম অধিবেশনেই গুচ্ছের বিল পাশ করাতে চাইছে৷ ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, চতুর্দশ থেকে ষোড়শ লোকসভায় প্রথম অধিবেশনে মাত্র আট থেকে দশটি বিল পাশ করানো হয়েছে৷ বিরোধীরা তাই এক সুরে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
তবে বিরোধীরা এই চরম সিদ্ধান্ত নিলেও বিল পাশ হবে না এমন কোনও গ্যারান্টি নেই৷ কারণ, সরকার বিল পাশ করাতে চাইছে৷ বিরোধীরা অধিবেশন বয়কট করলে, তাতে একটা নৈতিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে, কিন্তু তাতে সরকার বিল পাশ করানো থেকে সরে আসবে কি না সন্দেহ৷ কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ বলেন, লোকসভা বিল পাশ করেছে বলে রাজ্যসভা করবে তার কোনও মানে নেই৷ সরকার কি রাজ্যসভাকে লোকসভার রাবার স্ট্যাম্প করতে চাইছে না কি সংসদকে সরকারি বিভাগে পরিণত করতে চাইছে৷ ডেরেকের অভিযোগ, ভারতকে সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করতে চাইছে সরকার৷ এটা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই৷