মাসখানেক আগেই একটানা ক’দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে মহারাষ্ট্রে। আবার প্রবল বৃষ্টির জেলে এখনও বন্যা পরিস্থিতি আসাম জুড়ে। কিন্তু উল্টোচিত্র এ রাজ্যে। এখন্ব বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে বসে আছে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বৃষ্টির ঘাটতি থাকায়, দেখা দিচ্ছে কৃষি সঙ্কট। যার ফলে আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়েছে জেলার ধানচাষিদের।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় রীতিমতো সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। বৃষ্টির অভাবে মরতে বসেছে ধানের চারা। চাষের জমি ফেটে চৌচির। জলের অভাবে এখনও চাষের জমিই তৈরি করতে পারেননি চাষিরা। বৃষ্টি নেই, সেচের ব্যবস্থা করে যে ধান বাঁচাবেন, তারও উপায় নেই। কারণ পুকুর, জলাশয়ও শুকিয়ে কাঠ।
ধান চাষের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন পূর্ব মেদিনীপুরের ফুল চাষও। জেলার পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিকল্প চাষ হিসেবে ফুলচাষকেই বেছে নিয়েছেন এলাকার চাষিরা। বাজারে ফুলের চাহিদাও যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু এবার রোদ-বৃষ্টির খেলায় সঙ্কটে পড়েছেন সেই ফুলচাষিরাও।
শুকোতে বসেছে ঝিল। প্রখর রোদে সবুজ পাতা ঝলসে কলিতেই কুঁকড়ে গিয়েছে পদ্ম। ঝরে পড়েছে পাঁপড়ি। অথচ দু’মাস পরেই দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোয় পদ্মফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। তাই পুজোর সময়ে বাজারে ফুল সরবরাহের কথা ভাবতে পারছেন না পদ্মচাষিরা। বৃষ্টি নেই, সেচের ব্যবস্থা করে যে চাষিরা পদ্ম বাঁচাবেন, তারও উপায় নেই।
কারণ পুকুর, জলাশয় এমনকী রূপনারায়ণ নদী দেখলেও মনে হচ্ছে ফাঁকা মাঠ। তাই চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, দিনসাতেকের মধ্যে বৃষ্টি হলে পদ্মচাষ বাঁচবে। আর তা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা।
প্রসঙ্গত, পুজোর সময় প্রায় এক কোটি পদ্মের চাহিদা তৈরি হয় রাজ্যে। যার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট এবং হাওড়ার বাগনান, কুলগাছিয়া থেকে ফি বছর কয়েক লক্ষ পদ্মের জোগান আসে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় রেল লাইনের ধারে ঝিল, মেদিনীপুর ক্যানালের পাশের জলাশয়ে পদ্মের চাষ হয়। বৃষ্টির অভাবে সেই পদ্মের চাষ এবার ঠিকমতো করা যাবে কিনা, তা নিয়েই রীতিমতো সংশয় দেখা দিয়েছে।
বৃষ্টির অভাবে জেলায় আমন ধানের উৎপাদনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। জেলায় প্রায় ২ লক্ষ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। জুলাই ১-৩১ তারিখ পর্যন্ত মূলত আমনের চারা রোপণের কাজ চলে। কিন্তু এবছর জুলাইয়ের শুরু থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পেরোতে চললেও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা চারা রোপণ করে উঠতে পারেননি।
চাষিদের কথায়, ‘জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছিল। তাই অনেক আশা নিয়ে ধানের বীজ ছড়িয়েছিলেন। চারাও বেরিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। ফলে প্রখর রোদ ও গুমোট গরমে ঝলসে গেছে সেই চারা।’