‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত একের পর এক যে পিটিয়ে মারার ঘটনা সামনে আসছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই সাজানো। ভুয়ো অভিযোগ।’ এমন মন্তব্যের কারণেই এখন বিতর্কের শিরোনামে মোদী সরকারের মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি।
গত শুক্রবার বিহারের বানিয়াপুরে গরুচোর সন্দেহে উপজাতি সম্প্রদায়ের দু’জন এবং এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারে একদল মানুষ। সেই নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান। বিশেষত সংখ্যালঘুদেরই বার বার নিশানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আজম খান বলেন, ‘দেশভাগের সময় পাকিস্তান চলে গেলে এ ভাবে শাস্তি পেতে হত না মুসলিমদের। আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান যাননি কেন? আজ তার খেসারত দিতেই হবে আমাদের।’
আজম খানের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শনিবার নকভির প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার জবাবেই গণপিটুনির অভিযোগকে ‘সাজানো এবং মিথ্যা ঘটনা’ বলে দাবি করেন তিনি। এমন মন্তব্যের পরই ওঠে সমালোচনার ঝড়। বিরোধীদের দাবি, নকভি যে মন্তব্য করেছেন, দায়িত্বশীল এবং সাংবিধানিক পদে বসে সেই ধরণের মন্তব্য করা আসলে অপরাধীদের পরোক্ষে প্রশ্রয় দেওয়া।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘নকভিজিকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তার খবর কি আদৌ রাখেন উনি? আসলে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথাই নেই। শাসকদলের প্রত্যেকে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবারের জন্য দেশে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গত কয়েক বছরে গণপিটুনি এবং পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও। সেখানে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৬-২০১৯ সালের গোড়া পর্যন্ত দু’হাজার আটটি সংখ্যালঘু ও দলিত হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে তাদের কাছে। যার মধ্যে ৮৬৯টি ঘটনাই ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশের বেশিরভাগ সময়ই দলিত এবং সংখ্যালঘুরাই আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ‘সাজানো ঘটনা’— এই শব্দবন্ধটি যেন মোদী জমানায় ক্রমশই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে ন্যায়প্রার্থীর জন্য। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যেই কোনও ঘটনা শাসকের পক্ষে অস্বস্তিকর হলেই তাকে ‘সাজানো ঘটনা’ তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠছে দিন দিন।
মোদী যখন সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় বুলি কপচাচ্ছেন, সেইসময় তাঁরই মন্ত্রীসভার সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী নকভি বলছেন, গণপ্রহারের অথবা গণপ্রহারে হত্যার অধিকাংশ ঘটনাই সাজানো, অধিকাংশ খবরই ভুয়ো। ফলে বিজেপি সত্যিই এ সব রুখতে চায় কি না, তারা এই গণপ্রহারের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ‘সবকা বিকাশ’-এর ব্যাপারে মোদীর মন্ত্রীর মন্তব্যেই তাঁর সরকারের উদাসীনতা আরও স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ছে।