গত বুধবার উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র গ্রামে জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শ্যুট-আউটে মৃত্যু হয় ১০ জনের। আহতও হন অনেকে। আজ, শুক্রবার সকালে তাঁদের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কিন্তু তিনি যাতে সেখানে পৌঁছতে না পারেন, সেজন্য পথ আটকানো হয় তাঁর। বাধা পেয়েও তিনি ফিরে যেতে রাজি না হয়ে রাস্তার ওপর সদলবলে বসে পড়েন। এরপরই তাঁকে আটক করে যোগী সরকারের পুলিশ। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমি জানি না আমায় সরকারি গাড়িতে তুলে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানেই যাক, আমি যেতে রাজি।’
কেন তাঁকে বাধা দেওয়া হল এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগরে দেন প্রিয়ঙ্কা। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কংগ্রেস নেত্রী সাংবাদিকদের বলেন,, ‘আমি কেবল নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওঁদের নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে। আমার ছেলেরই বয়সি একটি ছেলে, গুলি খেয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমি সেখানে যেতে চাই। জানতে চাই, আমায় কীসের ভিত্তিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’ এরপরই তাঁর প্রশ্ন, কোন আইনের ভিত্তিতে আমাকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না? এ বিষয়ে নির্দেশিকাও দেখতে চান তিনি।
বিজেপি সরকারের অপদার্থতার কারণেই উত্তরপ্রদেশে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রিয়াঙ্কা। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলেও যোগী আদিত্যনাথের সরকারকেও তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে অপরাধীদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। দিনেদুপুরে হত্যা করছে। আর এটা ঘটেই চলেছে। সোনভদ্রের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ রকম নৈরাজ্য দেখেও প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রী ঘুমোচ্ছেন। এটা কি রাজ্যকে অপরাধমুক্ত করার নমুনা?’
প্রসঙ্গত, বুধবার গুজ্জর ও গোণ্ড সম্প্রদায়ের মধ্যে ৩৬ একরের একটি জমি নিয়ে গোলমালের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সোনভদ্র। ঝামেলা বাড়তে বাড়তে গুলি চালায় কিছু লোকজন। গুলিতে মারা যান ১০ জন। আহত হন ২৪ জন। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর দুয়েক আগে সোনভদ্রর কাছে উভা গ্রামের প্রধান ৩৬ একর জমি কিনেছিলেন। জমিটি ছিল কৃষিজমি। সেই জমির দখল নিয়েই ঝামেলা শুরু হয়। বুধবার জমির দখল নিতে এলাকায় যান গ্রামের প্রধান এবং তাঁর সঙ্গীরা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামবাসীরা। তারপরেই শুরু হয় ঝামেলা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁরা বাধা দেওয়ায় কোনও কথা না বলেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে গ্রাম প্রধানের সঙ্গীরা। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জন মহিলার। পুলিশ জানিয়েছে দু’পক্ষের এই সংঘর্ষে হাজির ছিল প্রায় ১০০ জন লোক। গুলিচালনা ও গণহত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামপ্রধান, তাঁর ভাই-সহ অভিযোগ আনা হয়েছে ৭৮ জনের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনা ঘটার পরেই প্রিয়াঙ্কা টুইট করেছিলেন, ‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে অপরাধীদের রমরমা ক্রমেই বাড়ছে। দিনের আলোয় খুনখারাবি হচ্ছে। সোনভদ্রে তিন মহিলা-সহ দশ জনের হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসন ঘুমোচ্ছে। এভাবেই নাকি রাজ্যটা অপরাধ-মুক্ত হবে!’ আর এদিন সকালে প্রথমে বারাণসী পৌঁছে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন প্রিয়াঙ্কা। তার পরেই রওনা দেন সোনভদ্রের উদ্দেশে। প্রিয়াঙ্কা যাওয়ার আগে থেকেই অবশ্য ব্যবস্থা নিয়েছিল যোগী সরকার। সোনভদ্র ও সংলগ্ন এলাকায় কোনও রকম জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আগে থেকেই। এর পরে প্রিয়াঙ্কা এলে সরাসরি আটকানো হয় তাঁকে।