বাংলায় প্রচলিত একটা কথা আছে, ‘রাজার ছেলে রাজা হবে’, এই ধারণাকে ভাঙতে চেয়েছিলেন সুপার তিরিশের ঋত্বিক। থুড়ি আনন্দ কুমার। চেয়েছিলেন, তাঁর গ্রামের গরিব ছাত্রেরা আইআইটি টপার হবে। মেধার সামনে হার মানবে পয়সা। তাঁর সফল না হওয়া স্বপ্ন, বাবার স্বপ্ন সবটাই সত্যি হবে তাঁদের মধ্য দিয়ে। কিন্তু জীবন বড় বালাই। বারবার নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে তাই আনন্দ কুমারকে। আর তাঁর চড়াই-উতরাইয়ের গল্পই শোনায় সুপার থার্টি। শোনায়, হেরে যাওয়াদের জেতার আখ্যান। বলে, পারবে তুমিও, যদি লাগাতার চেষ্টা থাকে।
বাবা পোস্ট অফিসের সামান্য কর্মী। তাঁর অল্প বেতনেই কোনওরকমে সংসার চলে। তবে অসম্ভব মেধাবী আনন্দ কুমার স্বপ্ন দেখে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করার, বড় হয়ে কিছু করে দেখানোর। অঙ্ক কষাই তাঁর নেশা, ভালোবাসা, সবকিছুই। জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই অঙ্ককে খুঁজে পায় সে। তা সে প্রেমিকার সৌন্দর্যই হোক, কিংবা প্রাত্যহিক কাজকর্ম। মেধাবী এই ছেলেটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েও অর্থনৈতিক কারণে সেখানে পড়তে যেতে পারেনি। বাবার মৃত্যু এক লহমায় বদলে দেয় আনন্দের চোখে ভেসে থাকা স্বপ্নটা। তারপর কি হয় জানতে আপনাকে দেখতে হবে সুপার থার্টি।
সুপার থার্টি কেন দেখবেন? দেখবেন, কারণ আজ আপনার চারপাশে দিকে দিকে গজিয়ে উঠছে বেসরকারি পঠনপাঠনের ব্যবসাকেন্দ্র। এ ছবি সরাসরিআলো ফেলে সেই রাজনীতিতে। এই রাজনীতি নিয়ে আগে কথা হয়নি। বারবার টাকা দিয়ে প্রলোভন দেখানো হয় আনন্দ কুমারকে। এক সময় পাপড় বিক্রেতা আনন্দ সেই প্রলোভনে পা ফেলেওকিন্তু পরে আবার পিছু হটেন। কারণ, তাঁর আদর্শ। তাঁর জেদ। গ্রামের গরিব ছাত্রদের নিয়েই খোলেন পাঠশালা। এ ছবি দেখবেন, কারণ, এখানে দেখা যায় পটনার এক মলিন গ্রাম। যেখান থেকে সামান্য লাইব্রেরির বই নিতে গিয়ে কথা শোনেন ঋত্বিক। কেম্ব্রিজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পরেও শুনতে হয় রাজনীতির লোকেদের ভাষণ। টাকার সাহায্যের জন্য ঘুরতে হয় দরজায় দরজায়। প্রেমিকাকে অন্যের বউ হিসেবে দেখতে হয়। কেউ কথা রাখেনা। কেউ কথা রাখেনি। তবু ঘুরে দাঁড়ান জেদি, অনন্য এক অঙ্কের মাস্টারমশাই। ঘুরে দাঁড়ান টাকার সামনে মেধা জিতবে—এই আদর্শে স্থির থেকেই। ঘুরে দাঁড়াতে শেখান তাঁর ছাত্রদের।
আনন্দ কুমারের চোখ দিয়েই স্বপ্ন দেখতে শেখে অর্থনৈতিক জীবনে পিছিয়ে পড়া, বিপিএল তালিকাভুক্ত দেশের কিছু অসম্ভব মেধাবী কিছু ছাত্র। ‘রাজার ছেলেই শুধু রাজা হবে’ এই তত্ত্বে বিশ্বাস রাখেন না আনন্দ কুমার। রাজা সেই হবে যে যোগ্য। তবে সবক্ষেত্রে এই ধ্রুব সত্যি কথাটা কেই বা বুঝতে চাইছে! সংবিধান সকলকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে ঠিকই, তবে অনেকক্ষেত্রেই দিন মজুরি করা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে শিক্ষাটা অধিকার না হয়ে স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা। অনেকক্ষেত্রেই কিছু অসৎ লোকজনের হাতের পুতুল হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। টাকা থাকলে, আর সঙ্গে অল্পবিস্তর মেধা থাকলে যে কেউ গিয়ে সেখানে হয়তবা পড়তে পারে। যাঁদের মেধা আছে, অথচ টাকা নেই তাঁদের কী হবে?
এই ছাত্রদের জন্যই রয়েছেন আনন্দ কুমার, বিনা পয়সায় গরিব মেধাবীদের তাঁদের যোগ্য জায়গায় পৌঁছে দিতে উঠে পড়ে লাগেন আনন্দ। তবে স্রোতের বিপরীতে হাঁটাটা মোটেও সহজ নয়। আনন্দের কুমারের ক্ষেত্রেও সহজ হয়নি। লড়াই, লড়াই আর লড়াই। আর উপস্থিত বুদ্ধি দিয়েই বাজিমাত করেছেন আনন্দ।
প্রশ্নটা হল অঙ্কের শিক্ষক আনন্দ কুমারের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে হৃত্বিক কি সফল? হ্যাঁ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। অভিনেতা হিসাবে, হৃত্বিক তাঁর সাধ্য মতো তুলে ধরেছেন অঙ্কের শিক্ষক আনন্দ কুমারকে। তাঁর মেকআপ, অভিনয় সবকিছু দিয়েই তিনি বিহারের বাসিন্দা আনন্দ কুমারের চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছেন। তবে কিছুটা যেন কানে লাগছে বিহারের বাসিন্দা হিসাবে ‘আনন্দ কুমার’ হৃত্বিকের ভাষার উচ্চারণ, সেটা যেন ততটাও নিখুঁত নয়। হৃত্বিকের পাশাপাশি অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয় ম্রুণাল ঠাকুর, আদিত্য শ্রীবাস্তব, বীরেন্দ্র সাক্সেনা, পঙ্কজ ত্রিপাঠির অভিনয় নিজ নিজ চরিত্রে প্রশংসনীয়।