তৃণমূল নেতৃত্বের মতে দুজনেই ‘গদ্দার’। দুজনেই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে দল ছেড়েছেন। যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। দুজনের মধ্যে এমনই একগুচ্ছ মিল থাকলেও কিন্তু তৃণমূলে থাকাকালীন মোটেই সম্পর্ক ভাল ছিল না মুকুল রায় আর অর্জুন সিংয়ের। কিন্তু লোকসভা ভোটের টিকিট পেতে মুকুল রায় রাতারাতি ‘দাদা’ হয়ে যান অর্জুন সিংয়ের। তাঁর হাত ধরেই গেরুয়া শিবিরে পা রাখেন ‘লক্ষ্যভ্রষ্ট’ অর্জুন। তারপর ভোটে জেতা। সাংসদ হওয়া। কিন্তু পায়ের তলার মাটি শক্ত হতেই ফের প্রকাশ্যে মুকুল-অর্জুনের শত্রুতা। হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলে ফিরে যেতেই শুরু হয়ে গেল প্রকাশ্যে দ্বৈরথ।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে পর্যন্ত রোজই মুকুল রায় তৃণমূলের লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন দিল্লীতে। হাতে তুলে দিচ্ছিলেন পদ্মপতাকা। এই তালিকায় ছিলেন হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান অংশুমান রায়ও। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি তৃণমূলে ফিরে যান। অঅভিযোগ করেন, জোর করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হয় তাঁদের। একই দাবি আরও সাত কাউন্সিলরের। স্বভাবতই এই ঘটনায় মুখ পোড়ে অর্জুন সিং ও মুকুল রায়ের। আর তারপরেই প্রকাশ্যে চলে আসে গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দল। কারণ এতে দলের দিলীপ-পন্থীরা বলতে শুরু করে, দিল্লীর কাছে স্কোর বাড়াতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হল মুকুল-অর্জুনকে।
শুধু তাই নয়, সূত্রের খবর, বিজেপির শীর্ষনেতাদের কাছেও কথা শুনতে হয় মুকুল রায় ও অর্জুন সিংকে। এরপরই ঘটনার যাবতীয় দায় সরাসরি মুকুলের ওপর চাপিয়ে দেন অর্জুন। সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের কাঁধ থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতে বলেন, ‘আমি জানতাম উনি (অংশুমান) বেইমানি করবে। মুকুলদাকে বলেছিলাম। মুকুল দা ওঁকে বিশ্বাস করে নিয়ে এসেছিল। তবে উনি কোনও দিনই আমাদের ছিলেন না।’ অন্যদিকে সুর নামিয়ে মুকুলও সাফাই গেয়ে বলেন, ‘অর্জুন আমাকে না করেছিল। কিন্তু আমার বয়স হয়েছে তাই ভাল ভাবে কেউ কিছু বললে সত্যি বলে মেনে নিই। ওকেও দলে নিয়েছিলাম।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অর্জুন সিংয়ের একচ্ছত্র রাজ চলে। সেখানে মুকুল রায় সাংগঠনিক শক্তি দেখিয়ে এগিয়ে যাবেন তা কোনওভাবেই মেনে নেবেন না অর্জুন। তাই সুযোগ মিলতেই এবার তিনি ফোঁস করে উঠলেন ‘দাদা’র বিরুদ্ধে। আর ব্যারাকপুরের লোকজন বলছেন, ওদের সম্পর্ক চিরকালই আদায়, কাঁচকলায়। এ যে হবে তা জানাই ছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি-তা বোঝা যায়নি। তবে চেয়ারম্যানের ফের তৃণমূলে ফিরে যাওয়া থেকে অর্জুন-মুকুল দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসা – গোটা ঘটনায় যে গেরুয়া শিবিরের মুখ পুড়েছে, তা বলাই বাহুল্য।