সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় এ কথা পরিষ্কার যে, শুধু বাঙালি হওয়ার ‘অপরাধ’-এই আজ আসামের বাঙালিরা ভয়ংকর অবস্থার সম্মুখীন। মোদীর এনআরসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্থিরতার ফলে সে রাজ্যে যেমন খুন হতে হচ্ছে একের পর এক বাংলাভাষীকে। তেমনি ডি-ভোটারের তালিকায় নাম ওঠার পর আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন অনেক বাঙালিকে। এবার ভোটার তালিকায় নাগরিকত্ব নিয়ে ‘সন্দেহজনক’ তকমা পড়ায় আত্মহত্যা করলেন আসামের আরও এক বাঙলাভাষী।
প্রসঙ্গত, এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালে আত্মহত্যার সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে এনআরসি-র পূর্ণ তালিকা। তার আগে যেন ‘আত্মহত্যার মেলা’ বসেছে বলে মন্তব্য করছেন সংখ্যালঘুরা। তাঁদের আশঙ্কা, তালিকা প্রকাশের পর বাঙালিরা অনেকেই বেঁচে থাকার অধিকারই হারাতে পারেন আসামে। শুধু বাঙালিরাই নন, মঙ্গলবার আসামে বসবাসকারী গোর্খারাও নিজেদের উদ্বেগের কথা শুনিয়ে এসেছেন রাজ্য এনআরসির সমন্বয়কের কাছে।
আসামের বরপেটা জেলার গোবর্ধন থানার সুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা অম্বর আলি। সোমবার তিনি আত্মহত্যা করেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তার নামে ‘ডি’ (সন্দেহজনক) ভোটারের নোটিশ জারি হওয়ার পর থেকেই মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণে ৪ সন্তানের বাবা অম্বর রঙ্গিয়ায় একবার এনআরসি কেন্দ্রে হাজিরা দিয়ে আসেন। তারপর কোনও কারণ ছাড়াই ফের ডাকা হয় তাঁকে। তবে আর্থিক সামর্থ না থাকায় দ্বিতীয়বার রঙ্গিয়ায় যেতে পারেননি তিনি। এতেই নাগরিকত্ব খোয়ানোর আতঙ্ক বাড়ে।
সংসারে অম্বরই একমাত্র উপার্জন করতেন। নাগরিকত্ব খুইয়ে জেলে গেলে সংসার কীভাবে সংসার চলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতেন বলে জানা গেছে। পরিবারের দাবি, এই মানসিক অশান্তিই আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে অম্বরকে। উল্লেখ্য, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন যে, ‘আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর নামে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে নিম্নমানের রাজনীতি করা হচ্ছে।’ তিনি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, ‘এনআরসি-র নামে বাঙালি খেদাও চালাচ্ছে বিজেপি।’ সেই অভিযোগ আবারও সত্যি বলে প্রমাণিত হয়ে গেল এবার।
প্রসঙ্গত, কাউকে বিদেশি বলে সন্দেহ হলে প্রথমে ভোটার তালিকায় তার নামের পাশে ‘ডি’ বা ‘ডাউটফুল’ যুক্ত হয়। এর পরবর্তী ধাপ হল ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করে জেলের ভেতরে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো। অম্বরের আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে সারা বোড়ো সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থার বক্সা জেলা কমিটি। তাদের অভিযোগ, এনআরসির কারণে সংখ্যালঘুরা বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেন। আর আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্যের মতে, আসামে আত্মহত্যার মেলা বসেছে। খুব পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।