সিনেমা যেন বাস্তব হল। একটি অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটা নির্দিষ্ট সারভেইলেন্স প্রোগ্রাম বা গণ-নজরদারির নিচে আনা সিনেমার চিত্রনাট্য হতে পারে বাস্তবে এমন করা সম্ভব কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়। তবে এই চিন্তার বিষয়কে সম্ভব করে তুলেছে চীন। মোটা দাগে বলতে গেলে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। বর্তমানে চীনে ২০০ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করা আছে। চীনের লক্ষ্য হলো, ২০২০ সালের মধ্যে পুরো চীনকে সম্পূর্ণভাবে সারভেইলেন্স প্রোগ্রামের আওতায় আনা।
চীন সরকার ২০০৫ সালে এই নজরদারি প্রোগ্রামের প্রজেক্ট হাতে নেয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্কাইনেট’। টার্মিনেটর ফ্র্যাঞ্চাইজির চলচ্চিত্রগুলোতে দেখানো কাল্পনিক মহাশক্তিধর-প্রতিরক্ষামূলক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার নাম ছিল ‘স্কাইনেট’। টার্মিনেটরের স্কাইনেট দিয়ে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এর মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে জনগণের উপর নজর রাখা হয়। সেই একই নামে চীন সরকার এই প্রজেক্ট শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক মেয়াদে বাড়ানো হয়েছে।
চীন সরকার থেকে বলা হয়েছে- এ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত করা, যেন যেকোনো অপরাধ ঘটার সাথে সাথেই অপরাধীকে খুব সহজেই চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। আবার কোনো অপরাধ সংঘটনের আভাস পাওয়া গেলে যেন তা প্রতিরোধ করা যায়।
জিডিপি অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ চীন৷ যে দুর্দান্ত গতিতে চীন শিক্ষা, প্রযুক্তি, ব্যবসা সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন তারাই বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে জনগণের সঠিক তথ্য নিশ্চিতের অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সরকারি নীতি-নির্ধারণে স্বচ্ছতা ইত্যাদি বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি দেশের উন্নয়ন প্রকৃতরূপে সাধিত হয় রাষ্ট্রের সকল জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। চীন সরকার যেভাবে যেরকম অর্থনৈতিক উন্নতির বেড়াজালে তাদের অপকর্মগুলোকে বৈধতা দিচ্ছে, তাতে করে ভবিষ্যতে হয়তোবা তিয়ানআনমেন স্কয়ারের মতো আরেকটি ঘটনার জন্ম দিতে পারে।