সেই নোট বাতিল থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদীর আমলে দেশে তৈরি হওয়া অসহনীয় পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বারবারই মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মোদীর সাধের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পকেও ‘ভাঁওতাবাজি’র আখ্যা দিয়েছেন। আর এবার বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়েও মুখ খুললেন নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘লোককে প্রহার করতে হলে এখন এ সব বলা হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, বাংলায় এসব ‘ইদানীংকালে’র আমদানি। বঙ্গ সংস্কৃতিতে কোনও কালেই এ ধরনের স্লোগানের কোনও জায়গা ছিল না।
শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন অমর্ত্য। বিষয় ছিল, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাঁর স্মৃতিতে কলকাতা’। তবে গতকাল সকালেও শিশির মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও বঙ্গ সংস্কৃতি এবং হিন্দুত্ববাদের ‘আস্ফালন’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘যখন শুনি কাউকে রিকশা থেকে নামিয়ে কিছু একটা বুলি আওড়াতে বলা হচ্ছে এবং তিনি বলেননি বলে মাথায় লাঠি দিয়ে মারা হচ্ছে, তখন শঙ্কা হয়। বিভিন্ন জাত, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য আমরা রাখতে দিতে চাই না। ইদানীং এটা বেড়েছে।’
বিকেলে যাদবপুরের সভায় ফের সে প্রসঙ্গ তুলে অমর্ত্য বলেন, ‘আজ যখন শুনি বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ ভীত, শঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরোন এই শহরে, তখন আমার গর্বের শহরকে চিনতে পারি না।’ বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, জয় শ্রীরাম, রাম নবমী— এ সব কিছুর সঙ্গেই বাঙালির কোনও যোগ নেই। বস্তুত, নতুন এই সংস্কৃতি আমদানির পিছনে বিভেদের রাজনীতি কাজ করছে বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এক সময় বিভেদের বাতাবরণ তৈরি করতে হিন্দু মহাসভা এ ধরনের সংস্কৃতির আমদানি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল বাংলায়। এখন বিজেপি ঠিক সেই একই উদ্দেশ্যে বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ সংস্কৃতির আমদানি ঘটানোর চেষ্টা করছে।