বাংলাদেশ সমর্থকরা বুক বাজিয়ে বলতেই পারেন যে, তাদের একজন সাকিব আল হাসান রয়েছেন। যিনি অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার বা ইংল্যান্ডের ইয়ন মর্গ্যানের তুলনায় কোনো অংশে কম না। একথা বলতে আর কোনোরকম দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ ওয়ার্নার বা মর্গ্যানের মতো দেশকে গর্বিত করার সবরকম রশদ রয়েছে সাকিবের কাছেও। সত্যিই তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। একদিকে ব্যাট হাতে রেকর্ড গড়ছেন, আবার অন্যদিকে বল হাতে সোনা ফলাচ্ছেন। এদিন তাঁর অনবদ্য পারফরম্যান্সের সুবাদেই বাংলাদেশের সেমিফাইনালে পৌঁছনোর স্বপ্ন জিইয়ে থাকলো।
সোমবারটা শুধুই যেন সাকিবের দিন। গত সোমবারেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরান করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। এই সোমবারেও তার অন্যথা হয়নি। হ্যাঁ সেদিনের মতো সেঞ্চুরি হয়তো হয়নি, কিন্তু এদিনও তাঁর ব্যাট জ্বলে উঠেছে। আফগানদের বিরুদ্ধে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশি তারকা। ৫১ রান ঝুলিতে ভরার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মালিক হয়ে যান তিনি। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটে ১৯ তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই অনন্য নজির গড়লেন তিনি। আর বল হাতে একাই আফগান ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামালেন। দশ ওভারে ২৯ রান দিয়ে তুলে নিলেন মূল্যবান ৫ টি উইকেট। ওয়ানডে কেরিয়ারে এটাই তাঁর সেরা বোলিং ইনিংস।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যর্থ লিটন দাস (১৬)। তামিম ইকবাল (৩৬) ও সাকিবই ঘুরে দাঁড়িয়ে দলকে এগিয়ে দেন। তারপর আফগান বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ৮৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। শেষদিকে স্কোরবোর্ডে আরও ৩৫ রান যোগ করে দলকে লড়াইয়ের জায়গায় পৌঁছে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। জবাবে আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন শুরু ভাল করলেও সাকিব ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল আফগান ব্যাটিং অর্ডার। গত ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে টক্কর দেওয়া দল এদিন বাংলাদেশের কাছে প্রায় একপেশেভাবেই পরাস্ত হল।
বিশ্বকাপে শুরুর আগে থেকেই বেশ চর্চায় ছিল আফগানিস্তান। ঠিক যেমন গতবছর রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে মিশরকে নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছিল। প্রথমবারের সুযোগে বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানবাহিনী জ্বলে উঠতে পারে কি না, সে কৌতূহল জাঁকিয়ে বসেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। হাজার হোক, যে দেশের বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে, নাকে আসে বারুদের গন্ধ, সেই দেশের একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটের হাত ধরে বদল আনার চেষ্টা তো করেছেন। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত জয়ের মুখ না দেখলেও সেই চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি রশিদরা। আজকের ম্যাচ হারের পর সেমিফাইনালে যাওয়ার আর কোনও আশা নেই তাঁদের। কিন্তু বিশ্বমঞ্চ থেকে নিঃসন্দেহে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে গেলেন।