বাথরুমের দেওয়ালে কিছু দিয়ে খুঁড়ে লেখা ‘আই কুইট’। তার ঠিক নীচেই পড়ে রয়েছে জিডি বিড়লা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা পাল। মুখে প্লাস্টিক বাঁধা, বাঁ’হাতের শিরার কাছে বেশ খানিকটা কাটা। বাথরুমের জানলা দিয়ে এই দৃশ্যই দেখেছিলেন এক শিক্ষিকা। পরে রক্তাক্ত কৃত্তিকাকে উদ্ধার করার সময় দেখা যায় পাশে পড়ে তিন পাতার একটা সুইসাইড নোট। আর এই সুইসাইড নোট হাতে পেয়েই ধন্ধে পড়েছে পুলিশ। তিন পাতা নোটের প্রতিটা ছত্রে যেন রাগ, দুঃখ, হতাশা ফুটে বেরাচ্ছে। কিন্তু কার উপর রাগ? কী কারণে এই হতাশা? সেটাই আপাতত বুঝতে পারছেন না তদন্তকারী অফিসাররা। যেভাবে কৃত্তিকা আত্মঘাতী হয়েছে তার সঙ্গে একটি ওয়ে সিরিজের মিল পেয়েছেন গোয়েন্দারা। আর এই মিল দেখে কার্যত চমকে গেছেন সকলে।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অবসরে বেশিরভাগই ওয়েবসিরিজ দেখত কৃত্তিকা। তাহলে কী আত্মহত্যার প্ররোচনা মিলেছিল ওই ওয়েবসিরিজ থেকেই? সেই কারণেই কি ফিল্মি কায়দায় শিরা কেটে এবং প্লাস্টিকে নিজের শ্বাসরোধ করে মৃত্যুর পথ বাছল নাবালিকা? এমন পদ্ধতির ভাবনা এল কী করে তাঁর মাথায়, উঠছে একের পর প্রশ্ন। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, রীতিমতো পূর্বপরিকল্পিত এই সিদ্ধান্ত। সে জানত শুধুমাত্র শিরা কাটায় মৃত্যু নাও হতে পারে আর সেই কারণেই তৈরি ছিল প্লান বি-ও অর্থাৎ শ্বাসরোধের পরিকল্পনা।
পুলিশ জানিয়েছে, কৃত্তিকার মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে থাকলে সেগুলো খুঁটিয়ে দেখা হবে, ইন্টারনেটে কী ধরণের জিনিস সে দেখত। কোনও প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে কিনা, সেটা দেখা হবে। আপাতত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এই সুইসাইড নোট কৃত্তিকার লেখা কিনা। যদি ওরই লেখা হয়, তাহলে এমন সম্ভাবনাও আছে যে, বাথরুমে বসেই এই নোট সে লিখেছে। কারণ সেখান থেকে একটি পেনও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরকম ঘটনা হলে পরিবার ও মনোবীদদের সঙ্গে কথা বলে এই সুইসাইড নোটের মানে উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোন মানসিকতায় সে এই নোট লিখেছিল, তা বোঝার চেষ্টা করা হবে।
কিন্তু এই ঘটনার আগে কিন্তু একবারের জন্যও অস্বাভাবিক লাগেনি দশম শ্রেণির এই ছাত্রীকে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্কুলে ঢোকার আগে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে কৃত্তিকা। বাবা হায়দরাবাদ যাচ্ছিলেন, তাই বাবাকে বিরিয়ানি নিয়ে আসার আবদার জানায় সে। মাকে বলেছিল কোল্ড ড্রিঙ্কস এনে রাখতে, বাড়ি ফিরে খাবে। সিক রুমে যাওয়ার আগে পর্যন্ত একেবারেই স্বাভাবিক ছিল বছর চোদ্দর মেয়েটা। পাঁচটা পিরিয়ডে ক্লাসও করেছে স্বাভাবিক ভাবেই। ইউনিট টেস্টও দিয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করেছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। আর তারপরেই নিজেকে নিয়ে শেষের পথে হেঁটে যায় কৃত্তিকা।