ভোটের আগে ও পরে গেরুয়া বাহিনীর তাণ্ডবে একাধিক বার উত্তপ্ত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণার ভাটপাড়া। সেই ধারা বজায় ছিল গতকাল ভাটপাড়া ফাঁড়ি থেকে থানায় উন্নীত হওয়ার দিনও। ব্যাপক গুলিবর্ষণ আর বোমাবাজিতে বৃহস্পতিবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। তবে গুলি, বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ গতকালই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছিল। তারপর গতকাল রাতভর পুলিশি তল্লাশির পর প্রচুর বোমা-আগ্নেয়াস্ত্রর পাশাপাশি আরও ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে ভাটপাড়ার অশান্তিতে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই এলাকা থমথমে। তবে শুক্রবার সকালেও ফের বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। ফলে রাস্তায় লোকজন খুব একটা নেই। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এলাকায় এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফ টহল দিচ্ছে রাস্তায়। শুধু তাই নয়। এই মুহূর্তে ভাটপাড়ায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। কেউ যাতে প্ররোচনা বা গুজব ছড়াতে না পারে তার জন্যই রাজ্য প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক যে নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, ব্যারাকপুর, বসিরহাট, বনগাঁ মহকুমায় ইন্টারনেট পরিষেবা শুক্রবার মাঝরাত পর্যন্ত বন্ধ। তবে, বারাকপুর মহকুমার মধ্যে থাকা দমদম থানা, বিমানবন্দর থানা, এনএসসিবিআই এয়ারপোর্ট থানা এলাকাকে এই নির্দেশিকার বাইরে রাখা হয়েছে। এদিকে, শুক্রবার ভাটপাড়া থানা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়।
প্রসঙ্গত, ভাটপাড়া বিধানসভার উপ নির্বাচন ঘিরে গত ১৯ মে থেকে তেতে ওঠে ভাটপাড়া। শুরু হয় বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীর ব্যাপক তাণ্ডব। তাদের ভাঙচুর, বোমাবাজি, গুলিবৃষ্টিতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা অঞ্চল। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা বারবার পরিস্থিতি সামাল দিলেও গত এক মাস ধরেই জারি রয়েছে অশান্তি। যখন তখন বোমাবাজি, গুলিবৃষ্টি দস্তুর হয়ে পড়েছে কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়।
গতকালও সকাল ন’টা নাগাদ গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, রিলায়েন্স জুটমিলের সামনে অশান্তি শুরু করে একদল বহিরাগত। তাদের মুখে ছিল ফেট্টি বাঁধা। তারপরেই মুড়ি মুড়কির মতো বোমা পড়তেয শুরু করে এলাকায়। গুলির লড়াইও চলে। যাতে মৃত্যু ঘটে দুজনের। এবং আহতও হন বেশ কিছুজন। এরপরই নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) প্রমুখ৷
ওই বৈঠকেই ভাটপাড়ায় অবিলম্বে শান্তি ফেরাতে স্পেশাল ড্রাইভ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অচলাবস্থা কাটাতে প্রশাসনকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলারও নির্দেশ দেন তিনি। তারপরই জগদ্দল ও ভাটপাড়া এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সাংবাদিক বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, এডিজি সাউথ বেঙ্গল সঞ্জয় সিংকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বিশেষ তদারকি ভার দিয়ে ভাটপাড়ায় পাঠানো হচ্ছে। র্যাফ মোতায়েন করা হচ্ছে। শুরু হয়ে যাবে রুট মার্চও।