কাশ্মীরের সাংবাজরা সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশের ওপর পাথর ছোঁড়া শুরু করার আগে একজন নিরীহ মানুষকে হাত-পা বেঁধে সামনে এগিয়ে দেয়।
আপনারাও ঠিক সেই কাপুরুষ পাথর যোদ্ধাদের মত আচরণ করলেন। রোগাক্রান্ত, নিরীহ গরীব মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন। এই জয়ের আনন্দে আপনাদের কি একবারও মনে পড়লো না এক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুদের কথা? মনে পড়লো না আপনাদের অবস্থান বিক্ষোভের জন্য যাদের অপারেশন হল না, যারা চিকিৎসা না পেয়ে পঙ্গু হয়ে গেলেন তাদের কথা? যে প্রসূতিটির সন্তান নষ্ট হয়ে গেল তাকে কী জবাব দেবেন আপনারা? কী জবাব দেবেন বাবা কিংবা মা হারানো ছেলেমেয়েদের? চিকিৎসার সঙ্গে মানবধর্মের একটা যোগাযোগ আছে, আপনারা কী সেই মানবধর্ম পালন করেছেন? একটু ভেবে দেখবেন?
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা কথা বলে সমস্যাটাকে দীর্ঘায়িত করার পর শেষমেশ নবান্নে গেলেন আপনারা। দেরীতে হলেও আপনাদের শুভবুদ্ধি হয়েছে এটা নিশ্চয়ই আনন্দের কথা। তা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আপনাদের কী মনে হল? তিনি কী আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে, আপনাদের সমস্যাগুলিকে নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক ছিলেন না? মন্ত্রী ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে এত বড় বৈঠক কী এনআরএসে গিয়ে করা সম্ভব ছিল? আপনাদের সমস্যা, অভাব, অভিযোগ, অসুবিধাগুলিকে সাধারণ মানুষের রায়ে নির্বাচিত তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দেন বলে সমস্যা মেটাতে এই সুচিন্তিত বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল বলে আপনাদের মনে হয়নি? একটু ভেবে দেখবেন?
যুদ্ধে জিতে বিজয় মিছিল করায় কোন অপরাধ নেই। কিন্তু সবসময় আপনাদের পাশে থাকা এবং আপনাদের দাবীদাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল সাংবাদিকদের সঙ্গে আন্দোলন চলাকালীন সময় যে দুর্ব্যবহার করেছেন তা কি ঠিক হয়েছে? নিজেদের নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাওয়ার পাশাপাশি আপনাদেরও কিন্তু সাধারণ গরীব মানুষের সুচিকিৎসার গ্যারান্টি দিতে হবে। গ্যারান্টি দিতে হবে তাদের সঙ্গে আর দুর্ব্যবহার না করার। তাদের কোনভাবেই ফিরিয়ে দেওয়া চলবে না। এটা না করা গেলে আপনাদের অধিকারগুলো কিন্তু একপেশে হয়ে যাবে, তাতে আর কোন দায়িত্ব থাকবে না। একটু ভেবে দেখবেন?
একশ্রেণীর রোগীর বাড়ির লোকেদের ব্যবহার নিয়ে আপনাদের অভিযোগ আছে। আপনাদের বক্তব্য তাদের হাতে আপনাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। ঠিক তেমনি সাধারণভাবে হাসপাতালে আসা মানুষজনের চিকিৎসকদের ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ আছে। তারা বলেন, ডাক্তাররা পরিষ্কারভাবে কিছু জানান না, দায়সারাভাবে রোগী দেখেন। বাইরে প্র্যাকটিসে বেশি সময় দেন, ভালো চিকিৎসার নামে বড় নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করেন। আমি মনে করি, সব ডাক্তারই এরকম এই অভিযোগ মোটেই ঠিক নয়, তাহলে হাসপাতালগুলি চলছে কেমন করে? কিন্তু এমন ডাক্তার যে একেবারেই নেই তাও তো আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা বলেনা। আপনাদের নিরাপত্তা নিঃসন্দেহে একটা বড় ব্যাপার, কিন্তু রোগীর নিরাপত্তার ব্যাপারটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পেশেন্টদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে কাজটা অনেক সহজ হবে। একটু ভেবে দেখবেন?
একটা ব্যাপার আমার খুব খারাপ লেগেছে। এসএসকেএম-এ লক্ষ্য করলাম, কিছু জুনিয়র ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। তাকে দু-চার কথা শুনিয়েও দিলেন। এটা কী করার কোন দরকার ছিল? নবান্নে আপনাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যেমন আচরণ করেছেন ঠিক তেমন আচরণ কী আপনারা রাজ্যের জনদরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে করেছিলেন? তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্যসমস্যার দ্রুত সমাধান করতে চান বলেই সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হোক তা চাননি, তাই আন্দোলন বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আপনারা আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন এরপর মানুষ ক্ষেপে গিয়ে রাস্তায় নামবে সেটা বুঝেই। অন্তত তেমনই বলছে সাধারণ মানুষ। আমি অসাধারণ নই, তাই সাধারণ মানুষের কথাটাই বিশ্বাস করি। মোদ্দা কথা, মানুষের ক্ষোভই আপনাদের জঙ্গি আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরিয়ে এনেছে। এতটা মারমুখী হওয়া কী আপনাদের উচিৎ হয়েছিল? একটু ভেবে দেখবেন?
আমাদের মত গরীব দেশে ডাক্তারদেরকে রোগীরা ভগবান মনে করেন। তাদের কাছে সঁপে দেন নিজেদের। ঔদ্ধত্য নয়, আপনাদেরও সেই বিশ্বাসের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে। যে বুদ্ধিজীবীরা সমর্থনের নামে আপনাদের উসকে দিয়ে চলে এলেন তারা কিন্তু আপনাদের পাশে সবসময় থাকেন না। কারণ, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগই নেই। আপনাদের পাশে থাকেন সরকার আর থাকেন সাধারণ মানুষ। একটু ভেবে দেখবেন?
কোলাপসিবল গেট কিংবা নিরাপত্তা রক্ষী নয়, হাসপাতালে আপনাদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও হামলার সময় যে দিন সাধারণ মানুষ আপনাদের রক্ষা করতে দুর্বৃত্তদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন সেদিনই আসল লড়াই জিতে যাবেন আপনারা। নিজেদের সেবা ও ব্যবহার দিয়েই সেই বিশ্বাস অর্জন করতে হবে আপনাদের।
আন্দোলন নয়, সেবাধর্মই আপনাদের পরিচয় হোক।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত