এবার ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওয় মুখ পুড়ল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় থাকা দিল্লী পুলিশ তথা মন্ত্রী অমিত শাহের। ওই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, রাজপথে পড়ে যাওয়া এক প্রৌঢ়কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে একদল পুলিশ। মাঝেমধ্যে তাঁকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে, বুট পরা পা দিয়ে লাথিও কষানো হচ্ছে বুকে। তবে প্রথমে পুলিশের সঙ্গে লড়ছিলেন প্রৌঢ়। তাঁর হাতে খোলা তলোয়ার দেখে প্রথমে কাছে ঘেঁষছিল না পুলিশ। ক্রমশ দলে ভারী হয়ে পুলিশ কোণঠাসা করে ফেলে তাঁকে। পুলিশের হাতে মার খায় তাঁর ছেলেও।
পেশায় অটোচালক ওই প্রৌঢ়ের নাম সর্বজিৎ সিংহ, তাঁর ছেলের নাম বলবন্ত। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লীর মুখার্জি নগরের রাস্তায়। পুলিশের সঙ্গে সর্বজিতের ওই মারামারির ভিডিও ভাইরাল হওয়া মাত্রই উঠেছে নিন্দার ঝড়। শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় থাকা দিল্লী পুলিশের ‘নিষ্ঠুরতা’-র তীব্র নিন্দা করেছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহও সুবিচার চেয়ে অমিতের উদ্দেশ্যে টুইট করেছেন। দিল্লী গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির প্রাক্তন সভাপতি মনজিৎ সিংহ এবং একাধিক শিখ রাজনীতিক এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল বিজেপি। তবে মোদী ক্ষমতায় ফেরার পরে রাজধানীর প্রকাশ্য রাস্তায় শিখ-নিগ্রহের এই ঘটনা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে কেন্দ্রকে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে তড়িঘড়ি গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই সঞ্জয় মালিক ও দেবেন্দ্র নামে দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর এবং পুষ্পেন্দ্র নামে এক কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই গোটা ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানা গেছে।
মোবাইলে তোলা ভিডিওয় দেখা গেছে, একটি অটোর দরজা খুলে চালককে বেধড়ক পেটাচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। ‘গ্রামীণ সেবা’ পরিষেবার ওই অটোটির চালকই সর্বজিৎ। পুলিশের একটি গাড়ির সঙ্গে তাঁর অটোর সামান্য ধাক্কা লাগে। তখনই কয়েক জন পুলিশ গিয়ে সর্বজিৎ ও বলবন্তকে লাঠিপেটা করতে শুরু করেন। মার খেয়ে ক্ষিপ্ত সর্বজিৎও তলোয়ার বার করেন। পুলিশেরা তখন ফোন করে পাশের মুখার্জি নগর থানা থেকে সহকর্মীদের ডেকে পাঠান। শুরু হয় মারপিট।
তবে ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, বলবন্ত আগাগোড়াই ঝামেলা থামাতে চাইছিলেন। ‘আমার বাবাকে ছেড়ে দাও’— বলে চিৎকার করতেও শোনা যায় তাঁকে। এই ঘটনার নিন্দা করে দিল্লী পুলিশের মুখপাত্র অনিল মিত্তল জানিয়েছেনন, ‘অপেশাদারের মতো আচরণ করেছেন পুলিশকর্মীরা।’ নেটিজেনরাও বলছেন, পাগড়ি খুলে যাওয়া অবস্থায় সর্বজিতের বুকের উপরে চড়ে বসা, তাঁর মাথায়-বুকে লাথি মারা, বাবাকে বাঁচাতে যাওয়ায় কিশোর বলবন্তকে পেটানো— ক্যামেরাবন্দী হওয়া পুলিশের এ সব আচরণও নিন্দনীয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশেরও দাবি, মারামারি শুরু করেছিল পুলিশই।