সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ই সরকারি হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে কলকাতা পুলিশে এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হবে। প্রত্যেক জেলাতেও একজন নোডাল অফিসার হাসপাতালের নিরাপত্তা দেখবেন। যেমন কথা তেমনি কাজ। জানা গেছে, এবার থেকে শহরের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন কলকাতা পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার একজন আইপিএস কর্তা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নিলেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। এর জন্য ডিসি স্তরে নতুন পদ তৈরি করা হবে বলে জানান হয়েছে।
নোডাল অফিসার হিসাবে ওই আইপিএস কর্তা স্বাস্থ্য দফতর, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে নিরাপত্তার দিকগুলি দেখভাল করবেন। এছাড়াও সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও এনআরএস-এর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসা নিরাপত্তা বিষয়ক নানা দিক কার্যকর করার জন্য গতকাল সন্ধ্যার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা। পাশাপাশি মঙ্গলবার লালবাজারে এই বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। ওই বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং তারপরই হাসপাতালগুলির পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়গুলি ঘোষণা করবেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।
উল্লেখ্য, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী-জুনিয়র ডাক্তারদের জরুরি বৈঠকের পরই বিকেলে লালবাজারে ফিরে আসেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। লালবাজারে ফিরে এসেই তিনি হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে ফের জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তিনি ডেকে নেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (সদর) জাভেদ শামিম, অতিরিক্ত নগরপাল (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার, যুগ্ম নগরপাল (অপরাধদমন) প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ অন্যান্য আইপিএস কর্তাদের। সেই বৈঠকেই হাসপাতাল সুরক্ষার নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে লালবাজারের এক কর্তা জানান, শহরের হাসপাতালগুলির সুরক্ষার জন্য এবার এই প্রথম নোডাল অফিসার হিসাবে রাখা হবে ডিসি পদমর্যাদার এক অফিসারকে। যিনি শুধুমাত্র হাসপাতাল সুরক্ষার কাজেই নিযুক্ত থাকবেন।
তিনি এ-ও জানান যে, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রস্তাব অনুযায়ী শুধুমাত্র হাসপাতালের জন্য লালবাজারের টোল ফ্রি নম্বর ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ই-মেল আইডিও। উল্লেখ্য, ডিসি পদমর্যাদার নোডাল অফিসারের পাশাপাশি হাসপাতালগুলির সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আউটপোস্টেও বড়সড় রদবদল করা হবে বলে জানা গেছে। এতদিন পর্যন্ত ওই আউটপোস্টগুলির দায়িত্ব থাকতেন ওসিরা। এবার ওসিদের পরিবর্তে আউটপোস্টের দায়িত্বে থাকবেন অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররা। হাসপাতালগুলিতে সিসিটিভির ব্যবস্থা আরও ভাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। হাসপাতালের এই সিসিটিভির লিংক থাকবে আউটপোস্ট ও সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে।
প্রসঙ্গত, গতকাল নবান্নের বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে কোলাপসিবল গেট বসানো হবে। জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে দু’জনের বেশি লোক ঢুকতে পারবে না। পাশাপাশি, কোন রোগী কতটা অসুস্থ তা রোগীর আত্মীয়দের জানানোর জন্য তিন শিফটে লোক রাখা হবে। ভালো ব্যবহার করে তাঁরা রোগীর আত্মীয়দের রোগীর কন্ডিশন সম্পর্কে জানাবে। জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই কাজে নেমে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন।