ঠিক যেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের বদলা নিলো বিরাট বাহিনী। সে দিন টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন কোহলি। প্রথমে ব্যাট করে ৩৩১ তুলেছিল পাকিস্তান। তারপর চাপের মধ্যে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং। ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন সরফরাজরা। আর এ দিন বিশ্বকাপের মঞ্চে ঘটলো ঠিক উল্টো ঘটনা। টসে জিতে এদিন প্রথমে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠালেন পাক অধিনায়ক সরফরাজ। রোহিতের দুরন্ত ১৪০ এবং রাহুল ও বিরাটের হাফসেঞ্চুরির দৌলতে ৩৩৬ রান করলো ভারত। তারপরে রান তাড়া করতে নেমে চাপের মধ্যে ভেঙে পড়ল পাক ব্যাটিং। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ৮৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নিলে কোহলি ব্রিগেড।
আজ শুরু থেকেই বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল রোহিতকে। চার-ছয় মেরে রানের গতি বাড়াচ্ছিলেন তিনিই। অন্যদিকে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছিলেন কে এল রাহুল। ৩৫ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রো-হিটম্যান শর্মা। অন্যদিকে ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ান রাহুলও। ৬৯ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি করেন রাহুল।
৫৭ রান করে ওয়াহাব রিয়াজের বলে আউট হলে ব্যাট করতে নামেন কোহলি। রোহিতের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। দুজনেই পাক বোলারদের সহজে খেলছিলেন। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল রোহিতকে। ৮৫ বলে নিজের ২৪ তম সেঞ্চুরি করেন রোহিত। দক্ষিণ আফ্রিকার পর এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হলো রোহিতের। তারপরেও তাঁর ব্যাট থামেনি। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ১৪০ করে হাসান আলির বলে আউট হন রোহিত।
এরপর খেলার গতি বাড়ান কোহলি। ক্যাপ্টেনকে সঙ্গ দেন হার্দিক। ২১ রান করে আউট হন পান্ড্য। ধোনিও রান পাননি। ১ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও। কিন্তু এক দিকে টিকে ছিলেন একা কোহলি। মাঝে বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকে খেলা। তারপর খেলতে নেমে আমিরের বাউন্সারে ৬৫ বলে ৭৭ করে আউট হন কোহলি। আম্পায়ার আউট না দিলেও কোহলি ক্রিজ ছেড়ে চলে যান। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটে বল লাগেনি। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৬ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
পাকিস্তানের ব্যাটিং শুরু হওয়ার পরেই জোরালো ধাক্কা লাগে ভারতীয় দলে। বল করতে গিয়ে স্লিপ করে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান ফাস্ট বোলার ভুবনেশ্বর কুমার। ফলে তিনি আর বল করতে পারেননি। তাঁর ওভার পুরো করতে নিয়ে আসা হয় বিজয় শঙ্করকে। এর এসে প্রথম বলেই ইমাম উল হককে সাত রানের মাথায় আউট করে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম উইকেট নেন বিজয়। তারপর খেলা ধরেন ফখর জামান ও বাবর আজম। বেশ সাবলীলভাবেই তাঁরা খেলছিলেন। উইকেট না পড়লেও রান তোলার গতি ছিল খুব কম। যেই তাঁদের ব্যাটিং ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল তখনই বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন কুলদীপ যাদব। প্রথমে ৪৮ রানের মাথায় বাবর আজম ও তারপর ৬২ রানের মাথায় ফখর জামানকে আউট করে পাকিস্তানের ব্যাটিং এ বড় ধাক্কা দেন তিনি।
এই ২ জন আউট হওয়ার পর পাক ব্যাটিংয়ের আশা দাঁড়িয়ে ছিল অভিজ্ঞ হাফিজ, শোয়েব মালিক ও অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের উপর। কিন্তু একই ওভারে পরপর দুই বলে হাফিজ ও শোয়েবের উইকেট তুলে নেন হার্দিক পান্ড্য। হাফিজ মাত্র ৯ রান ও মালিক প্রথম বলেই শূণ্য করে আউট হন।
সরফরাজ কিছুটা ধরে খেলার চেষ্টা করলেও ৩০ বলে মাত্র ১২ রান করে বিজয় শঙ্করের বলে ফিরে যান তিনিও। এরমধ্যেই বৃষ্টি নামায় কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। খেলা শুরু হওয়ার পর ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটের বিনিময়ে ২১২ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস। ইমাদ ওয়াসিম ৪৬ করে অপরাজিত থাকেন। ৮৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় ভারত।
এই ম্যাচে জয়ের ফলে বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ভারতের পয়েন্ট দাঁড়ালো সাত। অর্থাৎ পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে উঠে এল ভারত। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে সাত বারের সাক্ষাতে সাত বারই পাকিস্তানকে হারালো ভারত। তৈরি হলো এক নতুন ইতিহাস। একইসঙ্গে প্রমাণ করে দিলো, বাপ বাপ হোতা হ্যায়…