এবার কিন্তু আপনারা মানুষের সহ্যের সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এক সপ্তাহ ধরে গোটা রাজ্যের হাসপাতাল অচল করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন আপনারা। আপনাদের লড়াই, দাবী এবং যুক্তিগুলির প্রতি বহু মানুষের মত আমারও সমর্থন আছে। কিন্তু একি শুরু করেছেন আপনারা? সব দাবী মেনে নেওয়ার পরও শুধু মুখ্যমন্ত্রী এনআরএস-এ গিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবেন এই গোঁ বজায় রেখে নিজেদের হাস্যকর করে তুললেন আপনারা! এই বদলার রাজনীতি চালিয়ে গেলে মানুষ কিন্তু আপনাদের দিক থেকে মুখ ফেরাবেন। একটু খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন এ ঘটনা কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে। আপনাদের ন্যায্য দাবীগুলো পিছনে চলে গেলে শুধু আপনারাই নন, ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমার মত হাসপাতালে আসা মানুষেরাও।
যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনারা নিজেরা সরকারি পরিষেবা ভালো করা নিয়ে দিনরাত গলা ফাটালেও নিজেরা কিন্তু নিজেদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান না। আপনাদের জন্য রয়েছে মহার্ঘ বেসরকারি নার্সিংহোম। আপনারা কেউই বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষের মত সোজা মেরুদণ্ডের মানুষ নন, যিনি নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালেই যেতেন, বেসরকারি হাসপাতালে নয়। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, সরকারি পরিষেবার ব্যাপারে আমার নিজেরই যদি সংশয় থাকে তাহলে মানুষকে তা ব্যবহার করতে বলবো কীভাবে?
আপনারা হাসপাতালে চলে গেলেন কিন্তু দিদির ঘনিষ্ট ও পরিচিত হওয়া সত্বেও কেউ নবান্নে এলেন না। এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য কী ব্যবস্থা করা যেতে পারে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কোন পরামর্শ দিলেন না, আলোচনা করলেন না তার সাথে। অথচ আপনাদের অনেকেই তো ছিলেন রাজ্য রাজনীতির পালাবদলের মুখ। আপনাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের নানা দায়িত্বে নিয়োজিত করেছেন, নানা সন্মানে ভূষিত করেছেন। এই সঙ্কটের সময় রাজ্যের মানুষের স্বার্থে আরও একটু ইতিবাচক ভূমিকা আপনাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তা না করে আন্দোলনকারীদের উৎসাহ দিয়ে রাজ্যের চিকিৎসা সঙ্কটকে আপনারা আরও বাড়িয়ে তুললেন। আপনারা নিজেরাও জানেন আপনারা চাইলেই যে কোন সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন, প্রয়োজনে বলেনও। শুধু দরকারের সময় আপনাদের ভূমিকাটা অন্যরকম হয়ে গেলো। সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেওয়া প্রবীণ চিকিৎসকদের ভূমিকা থেকে আপনারা শিখতে পারেন।
ডাক্তার ভাই ও বন্ধুদের বলছি সবরকম দাবী মেনে নেওয়ার পরেও মাতৃসমা একজন মহিলা আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবে এই জেদ করা শুধু অশোভনই নয়, অন্যায়। কারণ, এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজ্যের বহু নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন। হাসপাতাল ছাড়া এদের কোন যাওয়ার জায়গা নেই। আপনাদের দরজায় নিজেদের প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচানোর আর্জি নিয়ে আসা অসহায় মানুষগুলিকে আর ফিরিয়ে দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবেন এই দাবীর সঙ্গে কিন্তু আপনাদের মূল দাবীর কোন সম্পর্ক নেই। যত দিন যাবে মানুষ তা বুঝতে পারবেন, কিন্তু তার মধ্যেই ঝরে যাবে অসংখ্য প্রাণ। এর দায়িত্ব কিন্তু তখন আপনাদেরই নিতে হবে। নিজেদের ভুলের কথা ভেবে তখন কিন্তু আপনাদেরই মনখারাপ হবে।
এনাফ ইজ এনাফ। সত্যি আর পারা যাচ্ছেনা! এত পড়াশোনা করে নিজেদের মেধার জোরে ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছেন। কিন্তু আপনাদের গোঁয়ার্তুমি দেখছি যারা আপনাদের হাসপাতাল চত্বরে এসে পেটায় সেই মাস্তানদের মত। অন্তত নিজেদের পেশার প্রতি একটু সুবিচার করুন। আমাদের দেশের গরীব মানুষেরা আপনাদের ভরসায় বাঁচে। কর্মজীবনের শুরুতেই তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মত অপরাধ আপনাদের মানায় না। কোন বুদ্ধিজীবীদের প্রশংসা, নিন্দা, পিঠ চাপড়ানির আপনাদের দরকার নেই, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজে ফিরে আসুন।
পৃথিবীর কোন জায়গায় এভাবে ডাক্তাররা নিজেদের ইগো বজায় রাখতে কাজ বন্ধ করে অবস্থানে বসেন না। আপনাদের এই অহমবোধ এখন একটা বেলেল্লাপনার চেহারা নিচ্ছে, এই রাস্তা থেকে সরে আসুন। সরকারের সঙ্গে আপনাদের এই ইগোর টাগ অফ ওয়ারে যেন গলায় ফাঁস দেওয়া হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এটা একটা ক্ষমাহীন অপরাধ। ইগোর লড়াই চালিয়ে গেলে মানুষ কিন্তু আর আপনাদের পাশে থাকবে না। রাতারাতি উধাও হয়ে যাবেন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দরদী ও অভিভাবকরা।
অবিলম্বে কাজে ফিরুন, রোগীরা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত