বর্ণপরিচয়, বিদ্যাসাগর বিরচিত গ্রন্থ যা কিনা বাঙালির বাংলা শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে বিবেচিত হয় এখনও৷ দেশ ছাড়িয়ে এবার বিদেশের গন্ডীতে পৌঁছল বর্ণপরিচয়৷
কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পর, বাঙালির বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আবেগ সাগরের ঢেউয়ের মতো উত্তাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সকলে ফিরে দেখতে চেয়েছেন মাতৃভাষার অক্ষর পরিচয় করিয়ে দেওয়া, প্রথম পুরোহিতের সেই বইটি। ওই ঘটনা যেন শিকড়ে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। আবার বাঙালির হাতে সেই বর্ণপরিচয় ফিরেছে দ্বিগুণ উৎসাহে ও আকাঙ্ক্ষায়৷
বর্ণপরিচয় এখন কলেজস্ট্রিট ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি পরিবারের কাছেও পৌঁছেছে। কলেজস্ট্রীটের বইপাড়া জানাচ্ছে, বাঙালি আবার ছোটবেলার বর্ণপরিচয় ফিরে পড়ার দিকে ঝুঁকেছে। বলা যায়, বাংলা ভাষার বর্ণ শিক্ষার শুরুর দিনগুলোকে সে ছুঁয়ে দেখতে চাইছে। এবং ভাল লাগার সেই রেশটুকু ছড়িয়ে দিচ্ছে উত্তর পুরুষের কাছেও। বর্ণপরিচয় তাই প্রতি বছরই শ্রদ্ধা, শিক্ষা ও ভালবাসার নিরিখে ‘বেস্ট সেলার’!
বাঙালির হাতে বর্ণপরিচয় ফিরছে দ্বিগুণ উৎসাহে ও আকাঙ্ক্ষায়। এই মুহূর্তে বিদ্যাসাগর প্রণীত বর্ণপরিচয় শুধু দেব সাহিত্য কুটির নয়, আরও ৩০ থেকে ৪০টি প্রকাশন সংস্থা এই বই প্রকাশ করে থাকে। শুধু দেশেই নয়, বাঙালির বর্ণপরিচয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বিদেশে থাকা বাঙালিরা উত্তরসূরিদের হাতেও তুলে দিচ্ছেন।
ইতিহাসের সূত্র বলছে, ১৮৫৫ সালে প্রথমবার ছাপা হয় বর্ণপরিচয়৷ এরপর সংস্কৃত প্রেস থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত বিদ্যাসাগরের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনাতেই এই আকর বইটি ছাপা হত। এরপর বিদ্যাসাগর দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়লেন। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করল। বর্ণপরিচয়–সহ সমস্ত বই–ই হাইকোর্টের দায়িত্বে চলে গেল। বর্ণপরিচয় ছাপা কিন্তু কোনও বছরই বন্ধ থাকেনি। হাইকোর্ট নিজের দায়িত্বেই তা ছেপেছে। ৬০ বছর পর বইটির কপিরাইট উঠে যায়। ফলত, কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশন সংস্থা বইটি ছাপা শুরু করে। এখন যে বইটি আমরা মূল বর্ণপরিচয় হিসেবে দেখি, তা ‘রিসিভার সংস্করণ
দেব সাহিত্য কুটিরের অধিকর্তা রূপা মজুমদার জানালেন, বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার কপি বর্ণপরিচয় শুধু তাঁদের প্রকাশনা থেকেই বিক্রি হয়। বিদেশেও যায়। এছাড়াও যাঁরা বাকি প্রকাশক রয়েছেন, তাঁরাও নিয়মিত বইটি ছাপেন।
তবে, বিদ্যাসাগর যে আঙ্গিকে বইটি ছেপেছিলেন, প্রচ্ছদের যে রূপরেখা এবং রং তা ১০০ বছর পেরিয়েও অক্ষুণ্ণ রেখে ছেপে যাচ্ছে দেব সাহিত্য কুটির। প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ দু’খণ্ডই। দেব সাহিত্য কুটির ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছাপা বইটি অবিকল ভাবে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে নিলামে কিনে নিয়েছিল ১৯২৪ সালে। তার পর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বাংলার বর্ণপরিচয়ের আদি ও অকৃত্রিম বইটি একমাত্র প্রকাশক ওই সংস্থা।