২ দিনেই মোহভঙ্গ বিক্ষুব্ধ নেতাদের। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন ভোটের পর। এখন ফের পুরোনো দলেই ফিরতে চাইছেন দলত্যাগীরা। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরই তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়।লোকসভা ভোটের আগে যে নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছিলেন, রাতারাতি তাঁরাই গেরুয়া শিবিরে গিয়ে তাঁর সমালোচনা করতে শুরু করে দেন। তবে এবার সেই হিড়িকে মড়ক লেগেছে। বিজেপিতে গিয়ে ওই দলত্যাগীদের উপলব্ধি হয়েছে, তাঁরা এখন না ঘরকা না ঘাটকা। এদের মধ্যেই বেশ কয়েকজনের মোহভঙ্গ হয়েছে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার ফিরতে চাইছেন পুরোনো দলে।
সম্প্রতি বর্ধমানের এক যুবনেতা দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুর রায়ের হাত ধরে পদ্ম শিবিরে নাম লেখান তিনি। সূত্রের খবর, সেই তিনিই মাত্র কয়েক দিনেই হাঁফিয়ে উঠেছেন নতুন দলে। ন্যূনতম সম্মান দূরে থাক, জেলাস্তরের নেতারা একবার ফোনে কথা বলার সৌজন্যও দেখাননি। নিজে থেকে ওই যুবনেতা ফোন করলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আগে তাঁর ‘গেরুয়া’করণ হবে। বিজেপির মতাদর্শ ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত ক্লাস নেওয়া হবে। তার পরেই তাঁকে দেওয়া হবে কোনো সাংগঠনিক পদের দায়িত্ব। সেদিন তাঁর হাত ধরে যে নেতারা বিজেপিতে যোগদানের কথা ভেবেছিলেন, তাঁরাও এখন সব দেখে শুনে দশ পা পিছিয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী বলেন, “আমাদের দলে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম, নীতি, নিষ্ঠা, আদর্শ রয়েছে। যাঁরাই বিজেপিতে আসবেন, আগে সেগুলো তাঁদের মেনে চলতে হবে। আমরা আগেও বলেছি আবারও বলছি, বিজেপিকরণ করার পর তবেই আমরা তাঁদের হাতে সাংগঠনিক দায়িত্ব তুলে দেব। আমাদের কাছে আগে দল, পরে ব্যক্তি। অন্য দলের থেকে আমরা অনেক বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ। ফলে আমাদের দলে থাকতে গেলে, সেগুলো সবাইকে মানতে হবে। না মানতে পারলে তাঁরই সমস্যা হবে।”
ওই যুবনেতার দলে ফেরা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তৃণমূল ভবন সূত্রে খবর, ১১ তারিখে বিকেল তিনটে নাগাদ দলত্যাগী সেই যুবনেতাকে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এলাকার বিধায়কের ধারাবাহিক দুর্ব্যবহারের কারণে দলছাড়া ওই যুবনেতাকে কিছু বাড়তি দায়িত্বও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “ভোটের ফল বের হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, তৃণমূল দলটাই উঠে যাবে। কিন্তু যে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর দীর্ঘ দিনের আপসহীন সংগ্রামে এই দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই দলের ভিত এত সহজে নড়ে যায় না। প্রত্যেকটা মানুষ ভুল করে, আবার তাঁরাই সংশোধন করে নেয়।” সঙ্গে তিনি আরও করেন, “ভোটের ফল একবার দেখুন। বর্ধমান পূর্বে কোথাও বিজেপি ভোট পায়নি। পশ্চিমের ২ টি বিধানসভায় একটু বেশি ভোট পেয়েছে। কেন পেয়েছে, সেটা নিয়েও আমাদের দলে আলোচনা হচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো।”