আজ বিশ্বকাপের দশম ম্যাচ। এই দশম ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া। দু’টি দলই প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে সহজ জয় পেয়ে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় রয়েছে। গত শুক্রবার নটিংহ্যামেই পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে বশ মানিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। মাত্র ১৩ ওভারেই তারা জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। শনিবার একইভাবে ৭ উইকেটে জিতে আফগানিস্তানের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
স্বপ্নের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তুলনা অপছন্দ হলেও এ বারের দলটার খেলা বেশ লেগেছে ল্যাঙ্গারের। বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান পেস বোলিংয়ের ‘আগুন’ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা রয়েছে তাঁর। ল্যাঙ্গার যা বলছেন তাতে অস্ট্রেলিয়ার সমস্যার দিক, গত চার মাস স্পিনের বিরুদ্ধে খেলার জন্য বেশি প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু ইংল্যান্ডে চলতি বিশ্বকাপে ফাস্ট বোলারদের দাপাদাপি দেখে রাতারাতি নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আসলে শেষ ছ’মাস অস্ট্রেলিয়াকে মূলত খেলতে হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে। তাই স্পিনের বিরুদ্ধে খেলার জন্য বেশি করে তৈরি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বিশ্বকাপে ছবিটা ঠিক উল্টো। ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চদের সামনে এ বার পেস আক্রমণ সামলানোর চ্যালেঞ্জ।
গত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ‘গুরু’ ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘‘সম্ভবত চার মাস আমরা তৈরি হয়েছি স্পিনের বিরুদ্ধে খেলতে। কিন্তু এখন দেখছি পরিস্থিতি অন্য রকম।’’ তাঁর বিশ্লেষণ, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলার আগে স্পিন নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। ওদের বেশ কয়েক জন পেসার রীতিমতো ভাল। একই কথা বলতে হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে। নতুন রণকৌশলও নিতে হচ্ছে। তার উপর নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকছে। সবচেয়ে বড় কথা, হাতে একেবারে সময় নেই। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাই নেটে ছেলেরা সারাক্ষণই শর্ট বলের বিরুদ্ধে ব্যাট করছে। পেসারদেরও সে রকমই বলে দেওয়া হয়েছে।’’ অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ বেড়েছে গত শুক্রবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং দেখে। যেখানে মূলত আন্দ্রে রাসেলের ভয়ঙ্কর শর্টপিচ বোলিংয়ের সৌজন্যে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয়ে যায় মাত্র ১০৫ রানে। তার উপর বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে রাসেলের লাফিয়ে ওঠা বল বিশ্রী ভাবে লেগেছিল উসমান খোয়াজার চোয়ালে। আর সেই প্রস্তুতি ম্যাচেই ওশেন থমাসের শর্টপিচ বলে কব্জিতে চোট পেয়েছিলেন ওয়ার্নারও। মনে হয়, অস্ট্রেলিয়াকে এ সবই এখন ভাবিয়ে তুলছে।
অন্যদিকে বেশ স্বস্তিতে ক্যারিবিয়ান শিবির। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ক্রিস গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কার্লোস ব্রাথওয়েট তো প্রায় হুমকির সুরে বলে দিলেন যে, তাঁদের পেসাররা ঠিকঠাক বাউন্সার দিতে পারলে কেঁপে যাবে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং। চল্লিশ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ডের মাটিতেই। এমনকি প্রথম বিশ্বকাপও তারা ইংল্যান্ডেই জেতে। এ বার কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে? ব্রাথওয়েটের জবাব, ‘‘আমরা সবাই চল্লিশ বছর অপেক্ষার তাৎপর্যটা বুঝি। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, মাঠে নেমে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রাণপাত করব।’’ ব্রাথওয়েট যোগ করেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে দারুণ কিছু করার জন্য আমরা তৈরি। আমাদের দলেও অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের অসাধারণ মিশ্রণ।’’ এখানেই থামেননি ব্রাথওয়েট, ‘‘ড্রেসিংরুমে আমাদের সবার বিশ্বাস যে, শেষ চল্লিশ বছরে এ বারই দলের সামনে কাপ জয়ের সেরা সুযোগ এসেছে। প্রত্যেকে সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে মরিয়া।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলার ওসানে টমাস বলেছেন, ‘পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই। তাই প্রথম ম্যাচে কী হয়েছে তা ভুলে গিয়ে বৃহস্পতিবার মাঠে নামব। ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ফেরায় অজি ব্যাটিং লাইন-আপ এখন অনেক শক্তিশালী। তাই ওদের চাপে ফেলার জন্য লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে হবে আমাদের। পাশাপাশি স্টার্ক, কামিন্স, কুল্টার নাইল, স্টোইনিসরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তবে আমরা যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি।