‘আচ্ছে দিনে’ এবার খোয়া যেতে চলেছে দেশের লক্ষ লক্ষ প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্রাহকের সঞ্চিত আমানত! হ্যাঁ, দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অসংখ্য কর্মীর পেনশন ও পিএফের টাকা লগ্নি করা রয়েছে আইএলএফএস নামে যে সংস্থায়, তা আজ ঋণভারে জর্জরিত। এর ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্রাহকের সঞ্চিত আমানত খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিমা ও পেনশনের টাকাও সুরক্ষিত নয়। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি পুরো ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলেন।
সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পন রাধাকৃষ্ণণ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক জানিয়েছে, বিষয়টির তদন্তে হাত দিয়েছে সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস বা এসএফআইও। এই সংস্থা তদন্ত করে যা বার করবে, তার ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আইএলএফএসকে ভালো সংস্থা হিসেবেই উল্লেখ করেছিল ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি। কিন্তু খারাপ দিকগুলির উল্লেখ করা হয়নি। সেবিও এই ক্রেডিট রেটিং সংস্থার বিরুদ্ধে সেবি অ্যাক্ট, ১৯৯২-এর ১৫ এইচবি ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। সেবি রেগুলেশন, ১৯৯৯ অমান্য করলে আইন অনুযায়ী আর্থিক জরিমানা করা হবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, এসএফআইও’র রিপোর্টের পর সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএস)-এর ঋণ এখন প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, আইডিবিআই, এমএমটিসি, আইওসিএল, ইলেকট্রিসিটি বোর্ডস অব গুজরাত অ্যান্ড হিমাচল প্রদেশ, সিডকো, হাডকো-র মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কয়েক লক্ষ কর্মচারীর প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন ফান্ডের টাকা এই আইএলএফএসে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ দেখা যায়, ওই সংস্থার রেটিং কমিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ক্রেডিট রেটিং সংস্থা।
কী এমন হল যে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে ওই সংস্থার ক্রেডিট রেটিং এত কমে গেল? সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ছিল, কোনও একটি উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই চিঠির জবাবে এসএফআইও তদন্ত করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পন রাধাকৃষ্ণণ। অর্থাৎ, এবার গোটা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মমতা। যার ফলে রক্ষা পেল তাঁদের পেনশন ও পিএফের টাকা।