অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ। আজ বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে চলেছে ভারত। সাউদাম্পটনে আজ বিরাটদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। পরপর টানা দুটো ম্যাচ হেরে বেশ চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসে ফুটছে ভারত। সবরকম পরিস্থিতি বিচার করে দেখলে আজ ভারতই ‘ফেভারিট’, একই মত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের।
তবে এগিয়ে থেকে ভারত নামলেও চিন্তা আছেই, পরীক্ষাতে ফার্স্ট বয়ের চিন্তা হয় যেমন আজ বিরাটেরও ঠিক একই অবস্থা। গত দু’বছর ধরে ভারতীয় দল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছে। চার নম্বর পজিশন নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়াও হয়েছে। বিশ্বকাপের স্কোয়াড নির্বাচন ঘিরেও কম বিতর্ক হয়নি। আপাতত যাবতীয় বিতর্ক পিছনে ফেলে অধিনায়ক হিসাবে প্রথম বিশ্বকাপে দলকে খেতাব এনে দেওয়াই পাখির চোখ কোহলির। তবে কাজটা সহজ নয়। কিন্তু অসম্ভব মনে করার কোনও কারণ নেই।
বিরাটের নেতৃত্বে বিদেশের মাটিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’র সাফল্যের হার খুবই ভালো। কোহলির নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে নজির গড়েছিল ‘টিম ইন্ডিয়া’। দু’বছর আগে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে ভারত ফাইনাল খেলেছিল কোহলির নেতৃত্বে। যদিও সেবার হারতে হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তবে ভারত অধিনায়ক এখন অনেক পরিণত। বিশ্বকাপ জিতলে কোহলির ক্রিকেট বৃত্ত পূর্ণতা লাভ করবে। আর সেই কারণেই অনেকে বলছেন, বিরাট হলেন ভারতীয় দলের অর্জুন। আর মহেন্দ্র সিং ধোনি হলেন কৃষ্ণ। এই যুগলবন্দি সফল হলে ভারতের তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয় কেউ আটকাতে পারবে না!
ইংলিশ কন্ডিশনে পেসারদের ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পেস আক্রমণে যশপ্রীত বুমরাহ ও মহম্মদ সামির জায়গা প্রায় নিশ্চিত। তৃতীয় স্পেশালিস্ট পেসার খেলানো নিয়ে দোলাচলে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বিরাট বলছেন, ‘এখানে আবহাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচের রং বদলায়। তাই সব দিক বিচার বিবেচনা করেই আমরা প্রথম একাদশ গড়তে চাইছি।’ বৃষ্টি হলে পেসাররা সুবিধা পাবেন। সেক্ষেত্রে হার্দিক পান্ডিয়া তৃতীয় পেসার হিসাবে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। সেকথা মাথায় রেখে দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার খেলানোর কথাও ভাবছে ‘টিম ইন্ডিয়া’। চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদবের সঙ্গী কে হবেন? রবীন্দ্র জাদেজার পাল্লা ভারি। তবে যুজবেন্দ্র চাহালের নামও শোনা যাচ্ছে। জাদেজাকে খেলালে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংও মজবুত হবে। ভারতের হয়ে রহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান ওপেন করবেন। তিনে নামবেন বিরাট কোহলি। চার নম্বরে লোকেশ রাহুলের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। পাঁচে মহেন্দ্র সিং ধোনি। দারুণ ছন্দে আছেন মাহি।
বিশ্বকাপের শেষ দল হিসাবে অভিযান শুরুকে বেশ ইতিবাচক ভাবে নিয়ে কোহলি জানাচ্ছেন, “আমার তো মনে হয়, এটা আমাদের কাছে বাড়তি সুবিধার। এটা বোঝাতে চাইছি যে, ম্যাচের গতিপ্রকৃতি কী ভাবে এগোচ্ছে, মেঘলা অথবা ঝলমলে আবহাওয়ায় খেলা কেমন হচ্ছে, সেটা বুঝে নিতে পেরেছি। এটা সম্পূর্ণ অন্য ফর্ম্যাটের খেলা। সকাল সাড়ে দশটার সময়ে যে উইকেট থাকবে, সেটা বিকেলে কেমন দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়ে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে দেখলে নিজেদের তৈরি থাকতে হবে। অন্য দলগুলি কী ভাবে খেলছে, সেটা দেখেও শিক্ষা নিতে হবে। ফলে অনেক ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই অভিযান শুরু করতে চলেছি”।
অন্যদিকে পরপর দুটো ম্যাচ হেরে গেলেও আজকের ম্যাচ জেতার জন্যে মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। রাবাডার সঙ্গে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের স্নায়ুর লড়াই দারুণ উপভোগ্য হবে। খেলবেন ক্রিস মরিস। স্পিনার ইমরান তাহির বিপাকে ফেলতে পারেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। তবে হাশিম আমলা, ফাফ ডু’প্লেসি, কুইন্টন ডি’কক, আইদেন মার্করাম, ডেভিড মিলারের মতো ব্যাটসম্যানরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
তবে যথেষ্ট চিন্তার ছায়া দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে। চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছে ডেল স্টেইন।ডুপ্লেসি বলেছেন, ‘‘আমাদের প্ল্যান ‘এ’ পুরোপুরি ভেস্তে গিয়েছে। এ বার প্ল্যান ‘বি’র সাহায্য নিতে হবে।’’ দক্ষিণ আফ্রিকার প্ল্যান ‘এ’ ছিল, তাদের সেরা ফাস্ট বোলারদের এক সঙ্গে মাঠে নামানো। যেটা সম্ভব হচ্ছে না চোটের জন্য। প্ল্যান ‘বি’ তা হলে কী হতে চলেছে? ডুপ্লেসির কথায় পরিষ্কার, তাঁদের রসদ খুঁজতে হবে অলরাউন্ডার এবং স্পিনারদের মধ্যে থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রথমে পরিকল্পনা ছিল কেউ চোট পেয়ে গেলে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে অ্যানরিখ নর্টিয়া-কে খেলানো। ও ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারের উপরের গতিতে বল করতে পারত। এ বার আমাদের অলরাউন্ডারদের দিকে তাকাতে হবে। ভাবতে হবে, দু’জন অলরাউন্ডার খেলাব, নাকি দু’জন স্পিনারকে সুযোগ দেব।’’