পৌষমেলা ঘিরে তৈরি হল চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা! পৌষমেলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে তারা সরে যাচ্ছে বলে জানিয়ে দিল বিশ্বভারতী। পৌষমেলা পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেবে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ফলে এবছর মেলা নিয়ে উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন।
মঙ্গলবার রাতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্বভারতী জানিয়েছে, ‘আগামী ১৪২৬ সালের ৭-৯ পৌষ (ডিসেম্বর, ২০১৯) শান্তিনিকেতন পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ কৃত্যাদি (উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, মহর্ষি স্মারক বক্তৃতা, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন, সমাবর্তন, খ্রিস্টোৎসব ইত্যাদি) যথোচিত মর্যাদায় পালিত হবে। কিন্তু পৌষমেলা পরিচালনার দায়িত্ব এখন থেকে আর বিশ্বভারতীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না।’ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশ আদালত-সহ দেশের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের পালনীয় শর্তাবলি পূরণ করে এই বিপুল আয়তনের মেলা পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো বিশ্বভারতীর মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেই। এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখপ্রকাশও করেছেন কর্তৃপক্ষ।
এ বছরও ডিসেম্বরে বাংলা সালের তারিখের হিসেবে ৭ পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হবার কথা। সাত দিন ব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার পৌষ উৎসবের অন্যান্য কাজ কর্ম যেমন উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন, সমাবর্তন, খ্রিস্টোৎসবের মত আচারগুলি পালন করা হলেও পৌষ মেলা পরিচালনার দায়িত্ব আর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নেবে না বলেই এদিনের বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা। তাদের পক্ষে মেলার ব্যয়ভার বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে, শান্তিনিকেতন ট্রাষ্টের পক্ষেও মেলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাদের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর সহযোগিতা ছাড়া তাদের একার পক্ষে এই বিরাট আয়তনের মেলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফলে মেলা আয়োজিত হবে কিনা সেই নিয়ে রয়ে গেছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। আদৌ এই বছর মেলা হবে কিনা তা নিয়ে সেই নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে৷
সম্প্রতি পৌষমেলাতে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে কোন কার্যকারী ভূমিকা নিচ্ছে না বলে পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। সেই মামলা লড়তে হবে সুপ্রিম কোর্টে, মামলায় যুক্ত করা হয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকেও।বিশ্বভারতীর পক্ষে এই মামলা লড়তে হলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হবে। বর্তমানে বিশ্বভারতীর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এই মামলা লড়া সম্ভব নয়। একইভাবে মেলা পরিচালনায় বিশ্বভারতীর সরাসরি কোন ভূমিকা নেই। এক্ষেত্রে ট্রাস্ট যদি চায় তারা মেলা করবে না হলে বন্ধ হয়ে যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌষ মেলা না হলেও পৌষ উৎসব হবে।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি ধন্য এই পৌষ মেলা। মহর্ষি ‘ব্রাহ্ম’ ধর্ম গ্রহণ উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন। সেই থেকে ইংরাজি সালের হিসেবে ১৮৪৩ সাল থেকে আয়োজন হয়ে আসছে মেলার। কিন্তু এবার আয়োজনের দায়ভার কে নেবে সেই নিয়ে দ্বন্দের জেরে প্রশ্ন উঠল ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন নিয়েই৷