বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, আর্থিক শক্তি, পেশি শক্তির ঢালাও অপব্যবহার করেই এবার ভোটে লড়েছে বিজেপি। সে কথারই প্রমাণ মিলল এবার। ভারতের সাধারণ নির্বাচন সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব। তার খরচও বেশ বড় অঙ্কের। দিল্লীর প্রমুখ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ’ তাদের এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, এবারের লোকসভা ভোটে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি খরচ করেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা! গত লোকসভা ভোটের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। এবং সেই হিসেবে এবারের ভোটই এ পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে খরচসাপেক্ষ নির্বাচন।
এমনিতেই ভোট করতে এত বেশি খরচ আর কোনও দেশে হয় না। ভারতে ৯০ কোটি ভোটার। তাদের কাছে টানতে মাথাপিছু খরচ হয়েছে ৭০০ টাকার মতো। আর প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য গড়ে খরচ হয়েছে ১০০ কোটি! যদিও নির্বাচন কমিশন এবার কেন্দ্রপিছু সর্বোচ্চ খরচ বেঁধে দিয়েছিল ৭০ লক্ষ টাকায়। কিন্তু হিসেবেই পরিষ্কার, সেই বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করেনি বিজেপির মতো দলগুলি। মমতা প্রথম থেকেই এই অভিযোগ করে আসছেন, আর্থিক শক্তি, পেশি শক্তির ঢালাও অপব্যবহার হয়েছে এবার ভোটে। সেই বক্তব্যেই কার্যত সীলমোহর দিল সিএমএস–এর এই সমীক্ষা রিপোর্ট।
সিএমএস জানাচ্ছে, কোনও কোনও লোকসভা কেন্দ্রে জনসংখ্যা ৩০ লক্ষের কাছাকাছি। সেখানে খরচ ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬–তে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে খরচ হয়েছিল ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। ডলারের হিসেবে সেখানে প্রায় ৮.৭ বিলিয়ন খরচ হল ভারতের নির্বাচনে। এবং এই খরচের হার যদি বজায় থাকে, তা হলে ৫ বছর বাদে, অর্থাৎ ২০২৪ সালে ফের যখন দেশে সাধারণ নির্বাচন হবে তখন খরচের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ এক লক্ষ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান এন ভাস্কর রাও। তাঁর উদ্বেগ, ‘সমস্ত দুর্নীতির মূলে রয়েছে নির্বাচনী খরচ। এই সত্য যতদিন না উপলব্ধি করা যাচ্ছে ততদিন দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। দেশের সাধারণ নাগরিককে বুঝতে হবে।’ এবারের ৬০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪৫ শতাংশই খরচ হয়েছে বিজেপির হাত থেকে। ১০ বছর আগে যেখানে বিজেপির খরচের ভাগ ছিল মোট টাকার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিগুণ হয়েছে বিজেপির অর্থবল। ঠিক যেমনটা দাবি কিরেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। অন্যদিকে, অর্ধেক হয়েছে কংগ্রেসের আর্থিক সক্ষমতা। ১৯৯৮ সালের ভোটে মোট খরচের ৪০ শতাংশ ছিল কংগ্রেসের। ২০১৯ ভোটে সেটা কমে হয়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।