বিজেপিতে শুধু মোদী-শাহই ছড়ি ঘোরাবেন। তাঁরাই ঠিক করবেন কে মন্ত্রী হবেন আর কে নয়। নির্মমভাবে তাঁরা ছেঁটে ফেলবেন অভিজ্ঞ ও প্রবীন রাজনীতিকদের। সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়ার মতো প্রবীন রাজনীতিবিদকে মন্ত্রীপদ থেকে ছেঁটে ফেলার পর এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া। ২০১৪ সালে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হায়েছিলেন তিনি। জেতার পর হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আলুওয়ালিয়ার জেতা দার্জিলিং আসন পাল্টে দেয় বিজেপি। তাঁকে প্রার্থী করা হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে। এই আসন থেকেও ২,৪৪৯ আসনে জয় হাসিল করে নেন আলুওয়ালিয়া। কিন্তু আনকোরা আসন থেকে জেতার পরেও, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্বেও এবার আর তাঁকে দেওয়া হল না মন্ত্রীত্বের কুর্সি।
গত পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন অরুণ জেটলি। অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা চলছে তাঁর। তাই নিজেই জানিয়েছিলেন এবার আর মন্ত্রী হতে আগ্রহী নন তিনি। মোদী-শাহও তাঁকে চাপ দেননি। নির্মলা সীতারামণকে দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। কিন্তু জেটলির পাশাপাশি সুষমা স্বরাজকেও এবার মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন মোদী-শাহ। অথচ তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না জানালেও, মন্ত্রিত্ব নেবেন না বলে সর্বসমক্ষে জানাননি কখনও। বরং সূত্রের খবর, দলের তরফে সুষমা স্বরাজকে আলাদা ভাবে মন্ত্রিত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি নীরব থেকেছেন। অর্থাৎ মন্ত্রিত্বে তাঁর আপত্তি ছিল না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সুষমাকেও ছেঁটে ফেলা হল মন্ত্রীপদ থেকে।
রাজনৈতিক মহলে আলুওয়ালিয়া সুষমা ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। সুষমা স্বরাজ আবার আডবানী ঘনিষ্ঠ। অধিকাংশ নেতা-কর্মী এমনকী সমর্থকদেরও অমতে গিয়ে আডবানী-যোশীদের এবার আর টিকিট দেয়নি বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, এর সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপিতে আডবানী যুগের শেষ হল। আর এরপরেই ছেঁটে ফেলা হল আডবানী ঘনিষ্ঠ সুষমা স্বরাজকে। আবার একইসঙ্গে মন্ত্রিত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল সুষমা ঘনিষ্ঠ আলুওয়ালিয়াকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর সঙ্গেই একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। আর শুরু হল মোদী-শাহ যুগের।
অবশ্য বিজেপি কর্মীদের একাংশের মতে, একই রিজিয়নের বাবুল সুপ্রিয় থাকায় আলুওয়ালিয়ার মন্ত্রী হওয়া হল না। যদিও এই যুক্তি ধোপে টিকছে না। কারণ, আডবানী-যোশীদের টিকিট না দেওয়া থেকেই পরিষ্কার মোদী-শাহ ছাড়া গেরুয়া শিবিরের দক্ষ নেতা-কর্মীদের মতামতের কোনও মূল্য নেই বিজেপিতে। একইসঙ্গে আলুওয়ালিয়াকে মন্ত্রীপদ না দিয়ে মোদী-শাহ দলকে বার্তা দিলেন, প্রবীন আডবানী-যোশী ঘনিষ্ঠদেরও কোনও জায়গা নেই বিজেপিতে।