‘আচ্ছে দিনে’ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে জলকষ্ট। অবস্থা এমনই ভয়ানক যে শীঘ্রই দিল্লী, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলি থেকে পাততাড়ি গোটাতে হতে পারে বাসিন্দাদের। কারণ অবস্থা না পাল্টালে, আর এক বছর অর্থ্যাৎ ২০২০-র মধ্যেই ফুরিয়ে যেতে চলেছে ভারতের ২১ টি শহরের ভৌমজল। তীব্র জলকষ্টে ভুগতে চলেছেন দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ। আর এই জলকষ্টের পাশাপাশিই একই সঙ্গে আসতে চলেছে খাদ্যের সঙ্কট। কারণ, ভারতে ব্যবহৃত জলের ৮০ শতাংশ জলই লাগে কৃষিক্ষেত্রে। তাই দেশের কোনও অংশে জলাভাব দেখা দিলে, সেখানে দেখা দেবে খাদ্যাভাবও।
কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টেই এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ইতিহাসের সব চেয়ে ভয়াবহ জলসঙ্কটের মুখে ভারত। তাই সর্ব স্তরে অতি দ্রুত জলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার আবেদন জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগের তরফে। প্রসঙ্গত, পৃথিবীর মোট পরিশুদ্ধ জলের মাত্র চার শতাংশ আছে ভারতে। কিন্তু বিশ্বের জনসংখ্যার মধ্যে ভারতবাসীর শতকরা হার ১৬ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় জলের সঙ্কট এ দেশে ছিলই। সেটাই এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০ কোটি ভারতবাসী মৃদু থেকে তীব্র জলসঙ্কটের মধ্যে পড়ে গেছেন। তথ্য বলছে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় দু’লক্ষ মানুষ শুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে মারা যান। ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতীয় জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ এক ফোঁটা জলের জন্য হাহাকার করবেন। ২০৫০ সাল নাগাদ ভয়াবহ জলসঙ্কটে পড়তে চলেছে গোটা দেশই। ২০১৭-১৮ সালের অর্থনৈতিক সার্ভে থেকে জানা গেছে, জলসঙ্কটের তিনটি প্রধান কারণ, ১) দ্রুত বিপুল পরিমাণ জল মাটির তলা থেকে তুলে নেওয়া, ২) বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া, ৩) বর্ষাকালে বৃষ্টিহীন দিনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
উল্লেখ্য, আর ক’দিনের মধ্যেই বর্ষা শুরু হওয়ার কথা, অথচ তাপপ্রবাহ চলছে সারা ভারত জুড়ে। গতকাল (২ জুন) জানা গিয়েছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে যে ১৫টি স্থানে গরম সব চেয়ে বেশি, তার মধ্যে আছে ভারতেরই ১০টি শহর। রাজস্থানের চুরু ও শ্রী গঙ্গানগরে তাপমাত্রা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৪৮.৯ এবং ৪৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট এলডোরাডোয় বলা হয়েছে, উষ্ণতার দিক থেকে রাজস্থানের পরেই আছে পাকিস্তানের জেকোবাবাদ। সেখানে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরপ্রদেশের বান্দায় তাপমাত্রা ৪৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হরিয়ানার নারনুয়াল নামে এক জায়গায় তাপমাত্রা ৪৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য দায়ী পশ্চিমী বায়ু। অর্থাৎ পাকিস্তান ও রাজস্থানের মরুভূমি থেকে আসা উত্তপ্ত বাতাস। ফলে এ বছরও ভারতে বৃষ্টিপাত কম হতে চলেছে। এবং ভারতে জলসঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ভারতের বহু রাজ্য, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীশগড়, তামিলনাড়ু তীব্র জলসংকটে ভুগতে শুরু করেছে বর্ষার খামখেয়ালিপনায়। যদি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে ২০৫০ সালে ভারতের ৭০ শতাংশ জল দূষিত হয়ে যাবে। গ্লোবাল ওয়াটার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স -এ ১২২ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হবে ১২০ তম। ২০৫০ সালে ভারত জলাভাবের জন্যই ৬ শতাংশ জিডিপি হারাবে। জলসঙ্কটের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনেও। তবে এরপরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগ। এখনও পর্যন্ত এই সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি মোদী সরকার।