লোকসভা নির্বাচনে বাংলার পালে উঠেছিল গোপনে রাম-বাম আঁতাতের কথা। বাংলায় গেরুয়া শিবির আগেরবারের থেকে কিছুটা আসন বাড়াতে পেরেছে তা বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক লালে না পড়ে পড়েছিল গেরুয়ায়। শীর্ষ নেতারা এই আঁতাতের কথা স্বীকার না করলেও ভোট শতাংশের পার্থক্য থেকেই সেই চিত্র স্পষ্ট। আর তার জন্যই একেবারে শূণ্য হাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সিপিএমকে। বাংলার পাশাপাশি আর এক লাল দুর্গ ত্রিপুরার ভোট বাক্সেও ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। সেখানেও শূণ্যই থেকেছে বামেদের ঝুলি। এমনকি কেরলেও একটির বেশি আসন নিজেদের ঝুলিতে আনতে পারেননি বামপ্রার্থীরা।
নিজেদের ‘ঔদ্ধতা’ কিছুটা পিছনে রেখে নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনার পথে গিয়ে সিপিএমের অন্দরে উঠছে নানা প্রশ্ন। তামিলনাড়ু পারলে বাংলা কেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তায় গিয়ে বিজেপিকে ঠেকাতে পারল না? এরই উত্তর খোঁজার জন্য মঙ্গলবার প্রথম বৈঠকে বসেছে সিপিএম রাজ্য কমিটি।
এই লোকসভায় বাংলায় বাম ও কংগ্রেস হালে কোনো পানি পায়নি। এমন বিশ্লেষণই উঠে আসছে সিপিএমের জেলা কমিটিগুলির আলোচনায়। ভোট চাইতে গেলে অনেকে বাম প্রার্থীদের সরাসরি বলেই দিয়েছিলেন যে, এই নির্বাচনে অন্তত তাঁদের কাছ থেকে কিছু যেন প্রত্যাশা করা না হয়— এমন অভিজ্ঞতার রিপোর্টও এসেছে! কিন্তু বাম বাক্সের ভোট বিজেপির দিকে যাওয়ার পরে এ বার কর্মী-সমর্থকেরাও যাতে গেরুয়া পথে না বাড়ান, সেটাই এখন বড় উদ্বেগ সিপিএম নেতৃত্বের কাছে।
প্রসঙ্গত, এ বার লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় সিপিএম (১৭.৩১ শতাংশ) কংগ্রেস-আইএনপিটি জোটের (২৫.৩৪ শতাংশ) চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। রাজ্যের দু’টি আসনই জিতেছে বিজেপি (৪৯ শতাংশ)। বাম-কংগ্রেস এক হলে বিজেপি এই জয় সহজে পেত না। গত বছর বিধানসভায় কংগ্রেসের বড় অংশের ভোট বিজেপিতে চলে গিয়ে তারা ২ শতাংশে নেমে যাওয়ায় ত্রিপুরার সিপিএম তাদের হাত ধরতে আগ্রহ দেখায়নি। বিজেপির হাতে এক বছরেরও বেশি সমানে রক্তাক্ত হয়ে চলল বামেরা অথচ লোকসভায় তাদের চেয়ে বেশি ভোট পেল কংগ্রেস— এই প্রশ্ন উঠেছিল এ দিন ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। তাহলে কি আবার পরের নির্বাচনে বামেরা কংগ্রেসের হাত ধরতে চলছে? নিজেদের একা লড়াই করার ক্ষমতা কি হারিয়ে যাচ্ছে ‘কমরেড’-দের? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরছে জাতীয় রাজনীতির অন্দরে।