ভোট প্রচারে বেরিয়েই বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’-এর পাল্টা হিসেবে ‘জয় হিন্দ-জয় বাংলা’ স্লোগান তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, “জয় শ্রীরাম বাংলার সংস্কৃতি নয়। আমরা বলব, ‘জয় হিন্দ-জয় বাংলা’। আমি বন্দেমাতরমে বিশ্বাস করি, জয়হিন্দে বিশ্বাস করি, মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করি, কিন্তু বিজেপির ওই জয় শ্রীরাম স্লোগানে বিশ্বাস করি না। রামকে অবশ্যই ভক্তি করি। কিন্তু রামের নামে যারা তোলাবাজি করে, তাদের ভরসা করি না।” কিন্তু ২৩ মে ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গেছে, আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তারা। এবার বিজেপির এই জয় শ্রীরাম ক্যাম্পেনকে রুখে দিতে বাংলার জয়ধ্বনি তোলার আহ্বান জানালেন মমতা।
ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে নৈহাটিতে যে অবস্থান বিক্ষোভ করেছিল তৃণমূল, সেই মঞ্চ থেকেই দলনেত্রী কর্মী-সমর্থক এবং রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, জয় শ্রীরাম নয়, জয় বাংলা বলুন, জয় হিন্দ বলুন। সেইমতোই এবার আসরে নেমে পড়েছেন দলের নেতা-কর্মীরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো বাংলার বীর সন্তানদের ছবি দিয়ে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে, ‘আপনি যদি বাংলার সংস্কৃতিকে ভালবাসেন, তাহলে আপনার কলার টিউনে বেজে উঠুক বাংলার জয়ধ্বনি।’ শুধু তাই নয়। সেইসঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, ‘যখন আপনাকে কেউ ফোন করবে, তখন হ্যালো না বলে নিজের মাতৃভূমিকে সম্মান জানিয়ে জয় হিন্দ বলে সম্বোধন করুন। দেশের জন্য এটুকু আমরা সবাই করে মাতৃভূমিকে সম্মান জানাতে পারি। জয় হিন্দ, জয় বাংলা।’
ইতিমধ্যেই এই পোস্টে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। নেটিজেনরা দলে দলে এই বার্তা প্রচার করছেন। এ যে মমতারই মস্তিষ্কপ্রসূত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকেই সে কথা নিজের পোস্টে উল্লেখ করছেন। এতে কাজও হচ্ছে। কারণ দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে ফোনে হ্যালো বলার বদলে জয় হিন্দ ও জয় বাংলা বলতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বাদ নেই আম জনতাও। বিজেপির সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনকে রুখতে বাংলার মানুষের ফোনেও বেজে উঠছে বাংলার জয়ধ্বনি। গুজরাত ও বিহার থেকে আগত গুন্ডাবাহিনীর দাপটে যে বাংলার সংস্কৃতি বিপন্ন হওয়ার পথে তা ভাল মতোই টের পাচ্ছেন তাঁরা। তাই বাঙালিয়ানায় টগবগ করে ফুটতে থাকা রাজ্যবাসীদের কাছে এখন মমতার অঙ্গীকারই তাঁদের অঙ্গীকার- ‘বাংলাকে গুজরাত হতে দেব না’।