রাজনীতির মঞ্চে সব কিছুই ইস্যু হতে পারে। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে উঠে এসেছে এমন সব ইস্যু তা মানুষকে ভাবিয়েছে। ভোট বাক্সেও তার প্রতিফলন পড়েছে। চলেছে ‘সেনা’ নিয়েও রাজনীতি। আর নির্বাচন মিটে গেলেও তা থেমে নেই। দিল্লীর মসনদে ফিরেই এক অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বিজেপি সরকার। বলা হয়, বাংলা থেকে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হবে ‘শহীদ’ বিজেপি সমর্থকদের পরিবারদের। আর সেইমতো তালিকা তৈরি করে কিছুজনকে নিয়ে যাওয়াও হয়েছে দিল্লীতে। তবে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন দু’বছর আগে বসিরহাটে দাঙ্গায় নিহত কার্তিক ঘোষের পরিবার। বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলার শহীদ পরিবারের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিল নিহত কার্তিক ঘোষের পরিবারের। তবে দিল্লীতে যায়নি তারা।
প্রায় ২ বছর আগের ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন নমিতা ঘোষ। সবাই তাঁকে চেনেন নয়নদেবী নামে। বসিরহাটের ট্যাঁটরা বাজার পেরিয়ে ঘোষ পরিবারের বাড়ি। বাড়িতে ঢোকার মুখে কার্তিকবাবুর ছোট চায়ের দোকান ছিল। বাড়তি উপার্জনের জন্য মাছের খাবার বেচতেন। কার্তিকবাবুর বড় ছেলে দেবাশিস ঘোষ এখন বাবার চায়ের দোকানটা চালান। ছোট ছেলে প্রভাশিস একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সামান্য বেতনে কাজ করেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে জুলাই মাসের ৫ তারিখে বাবা গিয়েছিলেন মাছের খাবার হিসেবে কাটা মুরগির বর্জ্য সংগ্রহে। বসিরহাট তখন অগ্নিগর্ভ। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আপত্তিকর পোস্ট ঘিরে হিংসা।
দেবাশিসবাবু বলেন, ‘ফেরার পথে বাড়ির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই হামলা হয় বাবার ওপর। আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাই বাবাকে। একই অ্যাম্বুলেন্সে আমরাই নিয়ে যাই জখম ফজলু হককে। আমাদের দু’ভাইয়ের হাতে দুটি স্যালাইনের বোতল। একটি আমাদের বাবা কার্তিক ঘোষের অন্যটি ফজলু হকের।’ ফজলু সুস্থ হয়ে ফিরলেও কার্তিক ঘোষ ফেরেননি। ঘোষ পরিবার অসম্ভব সংযম দেখিয়েছিলেন। সংযত ছিলেন বলেই হানাহানি বেশিদূর গড়ায়নি। এই ঘটনার পর রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল মৃতের পরিবারের হাতে। আর ছিল ২ ভাইয়ের চাকরির প্রতিশ্রুতি। কার্তিকবাবুর দুই ছেলেরই সাফ কথা, ‘আমরা কোনও রাজনীতিতে নেই।’ স্বাভাবিকভাবেই এতে মুখ পুড়েছে মোদী সরকারের।