গত ২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর আজ শুক্রবারই প্রথম কোর কমিটির বৈঠকে বসেছিল তৃণমূল। আর সেখানেই সংগঠনে বড়সড় রদবদল করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশ দিলেন মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকারও। এর পাশাপাশি জয় হিন্দ বাহিনী এবং বঙ্গজননী বাহিনী কমিটিও গড়ে দেন মমতা।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা বৈঠকেই মমতা বলে দিয়েছিলেন এবার দল এবং সংগঠনের কাজে আরও বেশি মন দেবেন তিনি। এবার কার্যত সেই পথে হেঁটেই দলকে ঢেলে সাজালেন তিনি। আর তার ফলেই দায়িত্ব বাড়ল রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ এবং ‘বঙ্গজননী বাহিনী’ গঠন করা হবে। এদিনের বৈঠকে জয় হিন্দ বাহিনীর চেয়ারম্যান করা হয়েছে দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। আর বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে বঙ্গজননী বাহিনীর চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে।
নদীয়া জেলার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই নিয়ে এসেছিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তার পরেও জেলার রাণাঘাট কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। সেই কারণে মমতা আগেই জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে দু’ভাগে ভেঙে জেলা সভাপতির দায়িত্বে রদবদল করেছিলেন পর্যালোচনা বৈঠকে। এদিন জেলার পর্যবেক্ষকও পাল্টে দিলেন মমতা। এবার দায়িত্ব দিলেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মালদা জেলায় পর্যবেক্ষক করা হল দু’জনকে। তার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। অন্য জন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি।
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা বৈঠকেই উল্লেখযোগ্য ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি ফের আস্থা রাখলেন তাঁর ওপর। শুভেন্দু ছিলেন উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গলমহলের পর্যবেক্ষক। কিন্তু এ দিন তাঁকে সেই দায়িত্বের সঙ্গে কার্যত সারা রাজ্যেই সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার ঘোষণা, নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি অন্য যে কোনও জায়গায় প্রয়োজনে দলের কাজ দেখভাল করতে পারবেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু।
ভোটের আগে তো ছিলই, লোকসভার ফল ঘোষণার দু’দিন পর পর্যালোচনা বৈঠকে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, এ দিনও সেই প্রসঙ্গ ফের তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ইভিএম-এ আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করা ছিল। এ দিনও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি প্রোগ্রামিং করা না থাকত, তাহলে বিজেপি কী ভাবে আগে থেকে দাবি করল যে তারা ৩০০ আসন পাবে। তবে বৈঠকে হাজির এক নেতার সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতাদের চাঙ্গা করতে মমতা এদিন বলেছেন, দল ঘুরে দাঁড়াবেই। সে জন্য সবাইকে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার বার্তাও দিয়েছেন দলনেত্রী।
এদিন মমতা তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের রোজ তৃণমূল ভবনে গিয়ে বসার নির্দেশ দেন। নিয়মমাফিক রোজ তৃণমূল ভবনে বসার জন্য তৈরি হয় রোস্টারও। সেই ‘রোস্টার’ অনুযায়ী সোমবার তৃণমূল ভবনে বসবেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বসবেন শুভেন্দু অধিকারী আর শুক্রবার বসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।