একের পর এক মৃত্যুর খবরে তটস্থ হয়ে উঠছে হিমালয়। পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের মৃতদেহ উদ্ধার করতে যাওয়া দলের এক শেরপার মৃত্যুর খবর এসেছে। শুক্রবার বিকেলে সেই দলেরই শেরপা নিমা শিরিংয়ের মৃত্যুর খবর আসায় স্তম্ভিত নেপালের শেরপা গোষ্ঠী।
প্রসঙ্গত শুক্রবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার (ওয়েস্ট বেঙ্গল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন) উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী জানান যে বৃহস্পতিবার সাত শেরপার উদ্ধারকারী দলটি দীপঙ্কর ঘোষের দেহ উদ্ধার করে ক্যাম্প ফোরের কাছে। ক্যাম্প দুয়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে দীপঙ্করের দেহ। সেখান থেকেই হেলিকপ্টারে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হবে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। গোটা প্রক্রিয়ায় অন্তত দু-তিনদিন সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর বিকেলের মধ্যেই ওই দলের শেরপার মৃত্যুতে দিশেহারা বাকিরাও।
কাঠমাণ্ডুর পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে নিমা শিরিং নামের ওই শেরপা ঠিক কী কারণে মারা গেলেন, তা নিশ্চিত নয়। উদ্ধারকারী দলটি ফিরে এলেই তা সঠিক ভাবে জানা সম্ভব হবে। তবে মনে করা হচ্ছে, প্রচণ্ড ক্লান্তি এবম উচ্চতাজনিত অসুস্থতা একসঙ্গে ঘটার ফলেই হয়তো অকালে প্রাণ হারালেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৬ তারিখ সামিট করার পরে বিধ্বস্ত ছিলেন দীপঙ্কর ও তাঁর সহযাত্রী শেরপা। তাঁর নামার গতিও স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা ধীর হয়ে গিয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে অন্য শেরপাদের মুখে। সেই কারণেই হয়তো ক্যাম্প ফোরে পৌঁছনোর পথে অনেক দেরি করে ফেলেন তাঁরা। এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে আবহাওয়াও খারাপ হওয়ায় এই বিপত্তি ঘটে। আচমকা তুষারধসের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। দীপঙ্কর নিখোঁজ হওয়ার পরে, তাঁর পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থা ‘সেভেন সামিটস ট্রেক’ শেষমেশ ২১ মে উদ্ধারকারী কপ্টার পাঠিয়েছিল মাকালুতে নিখোঁজ পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের খোঁজে। কপ্টারটি ক্যাম্প-৪ এর ওপরে সাদা বরফের মধ্যে একটি কালো স্পট দেখতে পায় বলে জানায়। উদ্ধারকারী দলের অনুমান ছিল , ওই কালো স্পটটিই হয়তো দীপঙ্কর! তাই ২১ মে রাতেই সাত শেরপার একটি অভিজ্ঞ দলকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এজেন্সির তরফে। কপ্টারের চিহ্নিত এলাকায় পায়ে হেঁটে দীপঙ্কর বাবুকে জীবিত বা তাঁর দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালায় দলটি। বেসক্যাম্পে থেকে উদ্ধারকার্য পরিচালনা করেন দেবদাস নিজে। শেষমেশ আজ, শুক্রবার সকালে মাকালুর ক্যাম্প-ফোর এলাকায় কঠিন অভিযান চালিয়ে সাত শেরপার উদ্ধারকারী দলটি উদ্ধার করে বাংলার অন্যতম অভিজ্ঞ পর্বতারোহী, ৫২ বছরের দীপঙ্করের দেহ।
অন্য দিকে এভারেস্টের পথে মৃত্যু হয়েছে আরও তিন ভারতীয় পর্বতারোহী। শুক্রবারই নেপাল পর্যটন দফতরের আধিকারিক মীরা আচার্য জানিয়েছেন: পুনের বাসিন্দা ২৭ বছরের নিহাল আশপাক ভগবান, মুম্বইয়ের বাসিন্দা ৫৪ বছরের অঞ্জলি শরদ কুলকার্নি এবং ওড়িশার বাসিন্দা ৪৯ বছরের কল্পনা দাস গত দু’দিনে প্রাণ হারিয়েছেন এভারেস্ট অভিযানে।