অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল। খবর এল মৃত্যুই হয়েছে পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের। আজ সকাল সাতটা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার (ওয়েস্ট বেঙ্গল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন) উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী জানান, গত কালই সাত শেরপার উদ্ধারকারী দলটি দীপঙ্কর ঘোষের দেহ উদ্ধার করে ক্যাম্প ফোরের কাছে। ক্যাম্প দুয়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে দীপঙ্করের দেহ। সেখান থেকেই হেলিকপ্টারে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হবে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। গোটা প্রক্রিয়ায় অন্তত দু-তিনদিন সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শেরপা সূত্রের খবর, ১৬ তারিখ সামিট করার পরে বিধ্বস্ত ছিলেন দীপঙ্কর ও তাঁর সহযাত্রী শেরপা। তাঁর নামার গতিও স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা ধীর হয়ে গিয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে অন্য শেরপাদের মুখে। সেই কারণেই হয়তো ক্যাম্প ফোরে পৌঁছনোর পথে অনেক দেরি করে ফেলেন তাঁরা। এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে আবহাওয়াও খারাপ হওয়ায় এই বিপত্তি ঘটে। আচমকা তুষারধসের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। দীপঙ্কর নিখোঁজ হওয়ার পরে, তাঁর পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থা ‘সেভেন সামিটস ট্রেক’ শেষমেশ ২১ মে উদ্ধারকারী কপ্টার পাঠিয়েছিল মাকালুতে নিখোঁজ পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের খোঁজে। কপ্টারটি ক্যাম্প-৪ এর ওপরে সাদা বরফের মধ্যে একটি কালো স্পট দেখতে পায় বলে জানায়।
উদ্ধারকারী দলের অনুমান ছিল , ওই কালো স্পটটিই হয়তো দীপঙ্কর! তাই ২১ মে রাতেই সাত শেরপার একটি অভিজ্ঞ দলকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এজেন্সির তরফে। কপ্টারের চিহ্নিত এলাকায় পায়ে হেঁটে দীপঙ্কর বাবুকে জীবিত বা তাঁর দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালায় দলটি। বেসক্যাম্পে থেকে উদ্ধারকার্য পরিচালনা করেন দেবদাস নিজে। শেষমেশ আজ, শুক্রবার সকালে মাকালুর ক্যাম্প-ফোর এলাকায় কঠিন অভিযান চালিয়ে সাত শেরপার উদ্ধারকারী দলটি উদ্ধার করে বাংলার অন্যতম অভিজ্ঞ পর্বতারোহী, ৫২ বছরের দীপঙ্করের দেহ।
বরাবরই শৃঙ্গজয়ের নেশা ছিল দীপঙ্করের। আর সেই নেশাই প্রাণ কাড়ল দীপঙ্করের। বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট মাকালু অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন বাঙালি পর্বতারোহী। শৃঙ্গ জয়ের পরই বিপদের মুখে পড়েন তিনি। গত ১৫ মে মাউন্ট মাকালুতে সফলভাবে পদার্পণ করেন দীপঙ্কর ও তাঁর সঙ্গী নারায়ণ সিং। সামিট ক্যাম্পে ফেরার সময় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন নারায়ণ। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সামিট ক্যাম্পে। সেদিনই ফ্রস্টবাইটে ক্যাম্প ফোরেই মৃত্যু হয় তাঁর। পেশায় সেনা জওয়ান ছিলেন ওই ব্যক্তি। অন্যদিকে সামিট সেরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যান বাঙালি পর্বতারোহী হাওড়ার দীপঙ্কর। তারপর থেকেই শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। অবশেষে এদিন তাঁর খোঁজ মিলেছে। তাঁকে বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।