গতকালই ফল ঘোষণা হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের। আর তাতে দেখা গেছে গতবারের মতো এবারও দেশ জুড়ে বয়েছে মোদী লহরেও। তবে তা সত্ত্বেও কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই অক্ষত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং-এর জাহাজ। তাঁর রাজ্যেও সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারল না বিজেপি। সেখানে কংগ্রেস পকেটে পুরলো ১৩টি আসনের মধ্যে ৮টি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী-পত্নী প্রীনিত কাউরও রেকর্ড মার্জিনে জিতে নিলেন পাটিয়ালা লোকসভা আসনটি। এই নিয়ে চারবার এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে গেরুয়া স্রোতের মধ্যেও উত্তরের এই রাজ্যে যেভাবে কংগ্রেস তার আধিপত্য বজায় রেখেছে, তার পুরো কৃতিত্বটাই অমরিন্দর সিং তুলে দিয়েছেন দলীয় কর্মীদের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রাক্তন সেনা আধিকারিক অমরিন্দর সিংয়ের জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও মন্তব্যই এই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদীকে বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে ’৮৪তে পাঞ্জাবের শিখ দাঙ্গাকে হাতিয়ার করেছিল অকালি দল ও বিজেপির জোট।
তবে তাদের সেই প্রচারকে ঠেকাতে ২০১৫-র বেহবল কালান এবং কোটকাপুরায় পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনায় নিহতদের উদ্দেশ্যে বারগারি এলাকায় চটজলদি স্মৃতিসৌধ তৈরি করে দেন অমরিন্দর। এই বিষয়টিও রাজ্যের মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। যা তাঁকে নির্বাচনে অক্সিজেনও জোগায়। এর পাশাপাশি, অতীতে পাঞ্জাবিদের ধর্মগ্রন্থকে বিজেপির অশ্রদ্ধার অভিযোগ টেনে এনে লোকসভা নির্বাচনের আগে অমরিন্দর ব্যাপক প্রচার চালান। তিনি বলেন, বালাকোটে বিমান হামলা একটা ঘটনা। কিন্তু পাঞ্জাবে দাঁড়িয়ে গুরু গ্রন্থসাহেবকে অশ্রদ্ধা করার মতো অন্যায় পাঞ্জাবিরা সহ্য করবেন না। কারণ পাঞ্জাবিরা সাম্প্রদায়িক নন। তাঁরা শান্তিতে থাকতে চান।
তিনি আরও বলেন যে, ধর্ম বা রাজনৈতিক তাস খেলতে পছন্দ করে এমন কোনও ব্যক্তিকে পাঞ্জাব পছন্দ করে না। পাঞ্জাবে হাজার হাজার ফৌজির বাস। কিন্তু বিজেপির ক’জন ’৬৫-তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা সানি দেওলকেও বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। বলেছিলেন, সানি ফিল্মি ফৌজি। আর আমি বাস্তবের ফৌজি। তাঁর এইসব মন্তব্যও ব্যাপক প্রভাব ফেলে রাজ্যের জনমানসে। যার ফল এবার হাতেনাতে পেলেন ক্যাপ্টেন।