আজ, রবিবার সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট। বাড়ির মহিলারা আগেই বুথে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তার খানিকক্ষণ পরে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বুথের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মিনাখাঁর শালিপুর পঞ্চায়েতের খালিসাদি গ্রামের বাসিন্দা ভোলা। সঙ্গে পাশের বাড়ির একজন। বুথের বিশ গজ আগেই আমবাগানের ভিতর থেকে একদল লোকের ডাক। কেউ ভোলা তো কেউ আবার ‘ভোলা দা।’ সম্মানে কোনও খামতি নেই। কোলে বাচ্চা নিয়েই রাস্তা থেকে সামান্য নীচে আমবাগানে নামেন ভোলা। সামনে ওরা জনা আটেক।
তাদের মধ্যে থেকেই একজন বলে, ‘ভোলা দা বাড়ি চলে যাও। ভোট দিয়ে কী হবে!’ সন্তানকে আগলে ভোলা হেসেই জিজ্ঞেস করেন, ‘ভোট দেব না? কী বলিস তোরা?’ তাদের প্রশ্ন ‘কাকে দেবে?’ তখনও ভোলা হাসছেন। পাড়ার ছেলে। এমন করবে কখনও ভাবেননি। জটলার মধ্যে থেকেই একজন বলে, ‘ভোট দিও না ভোলা দা। না দিলে ভাবব আমাদের দিয়েছ। আর দিলে ভাবব অন্য লোককে।’ ভোলা নাছোড়। বলেন, ‘আমার ভোট আমিই দেব।’ গলার আওয়াজ চড়াতে শুরু করে ওরাও। ‘ভুল করছ ভোলা দা। সমস্যা হবে। ভাল হবে না। যা কাজ বলবে করে দেব। ভোট দিও না।’
ভোলা বুথের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আটকে দেয় ওরা। টেনে নিয়ে যায় বাগানের ভিতর। যারা একটু আগে দাদা বলে সম্মান দিয়ে তুমি সম্বোধনে কথা বলছিল, তাদেরই একজন বলে উঠল, ‘এই …… বাড়ি যা। অনেক বার বলছি। মেরে তোর ……। কোনও ………বাঁচাতে পারবে না। মিডিয়াকে ডাকলে আরও……।’ হ্যাঁ, শুরুতে সুর নরম করে, বিনয় দেখিয়ে বলা হলেও, তাতে কাজ না হওয়ায় ঠিক এভাবেই গলা চড়িয়ে মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় ওরা। এই ওরা কারা? ওরা হল গেরুয়া শিবিরের ‘বীরপুঙ্গব’রা। তবে শুধু মিনাখাঁ নয়, দেগঙ্গা, হাড়োয়া, সন্দেশখালি, মিনাখাঁর বিস্তীর্ণ এলাকায় এভাবেই ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভোটারদের বুথে ফেরায়।
বারাসত কেন্দ্রের অধিকাংশ ভোটারেরই এক অভিযোগ, রাস্তা আটকে বিজেপির কর্মীরা বলছে, ‘ভোট দিতে দেব না। দম থাকলে মিডিয়া ডেকে নিয়ে আয়।’ শুধু বলেই থেমে থাকেননি তাঁরা, সন্ত্রাসও চালিয়েছেন। যেমন দেগঙ্গার নুরনগর পঞ্চায়েতের একটি বুথে শাসক দলের এক কর্মীকে মাথায় বাঁশ দিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায় চিকিৎসকরা। আবার বাসন্তীতেও ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়া ও গেরুয়া সন্ত্রাসের অভিযোগে ওঠে। এমনকি পথ অবরোধও করে বিজেপি।সবমিলিয়ে বলা যায়, প্রথম দফা থেকেই যে গেরুয়া সন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল রাজ্য জুড়ে, আজ শেষ দফাতেও সেই ধারা বজায় রেখেছে পদ্মশিবির।