দেখতে দেখতে একদম শেষ লগ্নে এসে পৌঁছেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। আগামী ১৯ মে, রবিবার শেষ দফায় ৮ রাজ্যের ৫৯ আসনে ভোট। ২০১৪-র ভোটে এই আসনগুলির মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৪০টিতে জয় পেয়েছিল। এবারও কী ওই আসন ধরে রাখতে সক্ষম হবে গেরুয়া শিবির, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ৩০০-র বেশি আসন নিয়ে ফের মোদী সরকার ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে বিজেপি নেতারা দাবি করলেও, বাস্তব পরিস্থিতি মোটেই তাঁদের পক্ষে নেই। সূত্রের খবর, গতবারের জেতা আসন ধরে রাখা নিয়ে সন্দিহান খোদ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও। কারণ, বিরোধীরা এককাট্টা হয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্যে।
সপ্তম দফা নির্বাচনে পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে ১৩টি করে আসনে, বাংলায় ৯, বিহারে ৮, ঝাড়খণ্ডের ৩ আসনে নির্বাচন। এ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশে ৪টি করে, চণ্ডীগড়ে ১টি আসনে ভোট ১৯ মে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে প্রবল মোদী হাওয়ায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, এবারে মোদী হাওয়া নেই। তাই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে বিরোধীদের মহাজোট বিজেপিকে চাপে রাখছে। সূত্রের খবর, এই আশঙ্কা থেকেই নতুন জোটসঙ্গীর খোঁজও শুরু করেছে বিজেপি। আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা।
পাঞ্জাবে ১৩ আসনের মধ্যে ২০১৪-র নির্বাচনে বিজেপি ২টি, জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দল ৪টি আসন পেয়েছিল। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ৪টি এবং কংগ্রেস ৩ আসনে জয়ী হয়। তখন অবশ্য রাজ্যে এনডিএ সরকার ছিল। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস অন্তত ১০টি আসন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আপের অন্তর্কলহ এবং বিধানসভা ভোটে বিজেপি জোটের শোচনীয় পরাজয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে কংগ্রেস শিবিরের।
একই সঙ্গে চণ্ডীগড় লোকসভা কেন্দ্রেও নির্বাচন হচ্ছে। গতবার এই আসনটিতে বিজেপির কিরণ খের প্রায় ৭০ হাজার ভোটে জয়ী হন। এবারও তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী পবন কুমার বনসাল। উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার। তারপরেও স্বস্তি নেই গেরুয়া শিবিরের। রাজ্যের যুযুধান দুই বিরোধী শিবির এবার বিজেপিকে হারাতে এককাট্টা। সপা-বসপা এবং আরএলডির মহাজোট। গতবারের ৮০ আসনের মধ্যে ৭৩টি আসন পাওয়া বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মহাজোট। শেষ দফার ১৩ আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছিল এনডিএ।
শেষ দফায় প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী ছাড়াও ভোট আছে গোরখপুর, মহারাজগঞ্জ, কুশিনগর, দেওরিয়া, বাঁসগাও, ঘোসি, সালিমপুর, বালিয়া, গাজিপুর, চান্দৌলি, রবার্টসগঞ্জ এবং মির্জাপুর লোকসভা কেন্দ্রে। ২০১৪-র নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট, একমাত্র বারাণসী ছাড়া বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে সপা-বসপার মিলিত ভোট বেশি ছিল। সপা-বসপা উভয় দলই দাবি করছে, এবার গতবারের ফল ধরে রাখতে পারবে না গেরুয়া শিবির।
মধ্যপ্রদেশে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় ১৫ বছরের শিবরাজ সিং চৌহান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। রাজ্যে এখন কমল নাথের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার। গতবারে মোদী ঝড়ে শেষ দফার আট আসনের সবগুলিতেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। এবার? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি-কংগ্রেস হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে ৮ আসনের মধ্যে ৬টি দখল করেছিল কংগ্রেস। বাকি দুটি বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ৮ আসনে ২০০৯-এর পুনরাবৃত্তিই লক্ষ্য কংগ্রেসের।
বিহারের ৮ আসনের মধ্যে ৭টি এনডিএ পেয়েছিল। একটি (নালন্দা) আসন পেয়েছিল বর্তমান জোটসঙ্গী জেডিইউ। এবার কংগ্রেস-আরজেডিসহ বিজেপি বিরোধী দলগুলির মহাজোট হয়েছে। ২০১৪ -র ভোটে রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি এনডিএ-র শরিক ছিল। সেবারে দুটি আসন পেয়েছিল উপেন্দ্র কুশওয়াহর দল। ইতিমধ্যে এনডিএ ছেড়ে বিরোধী মহাজোটে শামিল হয়েছেন কুশওয়াহ। এছাড়াও পাটনা সাহিব কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা দলত্যাগ করে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন।
ঝাড়খণ্ডের তিন আসনে ভোট সপ্তম দফায়। এর একটি বিজেপি এবং দুটি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস-ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট। এবার সেখানে বিরোধীদের মহাজোট বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছে। হিমাচল প্রদেশে চার আসনে ভোট শেষ দফায়। চারটিই বিজেপি পেয়েছিল। কংগ্রেস এবার অন্তত একটি আসন কেড়ে নেবে বলে আশা করছে। সবমিলিয়ে গোটা দেশেই ব্যাকফুটে শেষ দফার ভোটে ব্যাকফুটে বিজেপি।