১৯৮৪ সালে যাদবপুরের তৎকালীন সাংসদ, সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন এক অনামী তরুণী। তারপর বাংলার রাজনীতিতে সেই জায়ান্ট কিলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ভূমিশয্যা নিতে হয়েছে অনেক রথী-মহারথীকেই।সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই আট বছর আগে রাজ্যের মসনদ দখল করার পর সংসদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কে ইতি পড়েছে। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বেড়িয়ে জনজোয়ার প্রমান করে দিল মমতা ম্যাজিক আজও অম্লান।
বাংলায় ফণী আসার পরেই গরমের দাপট বেড়েছে। খুব দরকার না থাকলে দুপুরের পর মানুষ আর ঘরের বাইরে বেরচ্ছেন না। কিন্তু সামনে লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের তাগিদেই প্রচার সভা করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু লোক হচ্ছে কই! যোগী আদিত্যনাথ, অমিত শাহ এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচার সভাতেও ফাঁকা চেয়ারের সারি।
অন্যদিকে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৪৪ দিন ধরে চষে বেরিয়েছেন সারা বাংলা। ১০২ টি প্রচার সভা করেছেন। ১৮ টি পদযাত্রায় হেঁটেছেন প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। আর সব জায়গাতেই উপচে পড়েছে ভিড়। খাওয়ানোর লোভ নেই, হ্যাঙারের স্বাচ্ছ্যন্দ নেই। শুধু একবার মমতাকে দেখার, দিদিকে ছোঁয়ার আকুলতা আছে। ভেঙে পড়েছেন মানুষ। সাধারণ ভোটারদের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা সব মমতাকে কেন্দ্র করেই।
মমতা হাঁটতে শুরু করতেই উপচে পড়েছে পথের দুপাশের ভিড়। সে বীরভূম হোক কিংবা বাগুইহাটি, মেদিনীপুর হোক কিংবা ম্যাডক্স স্কোয়ার। মমতা মানেই ম্যাজিক। মমতা মানেই জনজোয়ার। মমতা মানেই আবেগের অন্য নাম। মমতার কাছাকাছি আসার, একটিবার সামনে থেকে দেখার উৎসাহ তুঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাই, জোকা থেকে কদমতলা, শীলপাড়া থেকে সখেরবাজার- মুখ্যমন্ত্রীকে একবার দেখার জন্য রাস্তার দু’ধারে উপচে পড়তে থাকে ভিড়। একটিবার মুখ্যমন্ত্রীকে ক্যামেরাবন্দী করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে জনতা। মিছিল যত এগোতে থাকে, ততই সাধারণ মানুষের ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের। আশপাশ থেকে মিছিলে যোগ দিতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ।
পথ-পরিক্রমার দীর্ঘ রাস্তায় ভেপার ল্যাম্পের আলো হার মেনে যায় দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটের কাছে। দোকান, অফিস খোলা রেখেই মানুষ নেমে আসেন পথে। এই রাস্তার দু’ধারে বহুতল এবং বাড়ির ছাদ, বারান্দা, জানালা থেকেও মমতাকে দেখার জন্য উৎসাহী মুখ বাড়িয়ে থাকার ভিড় ছিল নজর কাড়ার মতো। দীর্ঘ জনস্রোতে আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষেরই ভিড় ছিল। পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের শঙ্খ, উলুধ্বনিতেও মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রতিটা মিছিল।
মমতাকে একবার দেখার জন্য রাস্তার ধারে মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রিঙ্কু মজুমদার বললেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে উনিই পারেন লড়াই করতে। উনি বেহালায় মিছিল করছেন শুনে ওঁকে একটিবার দেখার জন্য ছুটে এসেছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলে হাঁটার জন্য ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছিলেন বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা উমেশ সরকারও।
বললেন, ‘মঙ্গলবার শহরে যা দেখলাম, তারপর এই মিছিলে এসে পা মেলানো থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনি’। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জনমোহিনী শক্তির কাছে উড়ে যাচ্ছে মোদী-শাহরা। ২৩ মে-র আগে চর্মচক্ষুতেই এটা দেখতে পাচ্ছে বাংলার আমজনতা।