শেষ দফায় প্রচারের সময় কমিয়ে দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু তাতে কী? যেটুকু সময় তিনি পেলেন, তাকেই প্রতিটা ঘণ্টা-মিনিট ধরে কাজে লাগালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা দিয়েই দু’দিনের প্রচার একদিনেই সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ বৃহস্পতিবার মথুরাপুর ও ডায়মন্ড হারবারে জনসভা সেরে তিনটি পদযাত্রা করলেন তিনি। পায়ে হেঁটেই ঘুরলেন মহানগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আর শেষবেলায় নেত্রীর দাপুটে প্রচারে সঙ্গ দিতে হাঁফ ধরে গেল দলের বাকি নেতা, কর্মী সমর্থকদের৷
প্রসঙ্গত, অমিত শাহের রোড শো-এর দিন কলকাতা জুড়ে প্রচারের সময়ে গেরুয়া সন্ত্রাসের জেরে প্রচারে কাঁটছাঁট চালিয়েছে কমিশন৷ ফলে দু’দিনের প্রচার কর্মসূচি সারতে হত একদিনেই৷ যা এক কথায় ছিল প্রায় অসম্ভব। তবে মমতা বারবারই বলেন, ‘পাঙ্গা নিলেই আমি চাঙ্গা হয়ে যাই।’ এবার সেই কথা মতোই স্লগ ওভারে ঝোড়ো নয় একেবারে দাপুটে ব্যাটিং করে দেখিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ পরপর মথুরাপুর ও ডায়মন্ড হারবারে জনসভা সেরে কোনও বিশ্রাম বা বিরতি ছাড়াই সারলেন তিনটি রোড শো৷
তবে কোনও হুড খোলা জিপ বা ট্যাবলোতে নয়, পায়ে হেঁটেই দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার এবং অন্তিম পর্বের প্রচার সারলেন মমতা৷ তাঁর প্রতিপক্ষরা হুডখোলা জিপে চড়ছেন। কপ্টারে চেপে জনসভা করতে যাচ্ছেন। জনসভা শেষে কপ্টারেই ফিরে আসছেন। তিনি কিন্তু দু’পায়েই ভরসা রাখছেন। বাইরে ৩৮ ডিগ্রির উপর চড়েছে তাপমাত্রার পারদ৷ সঙ্গে অস্বস্তিকর আর্দ্রতার কারণে গরমের অনুভব আরও বেশি৷ এমন অবস্থায় কলকাতার রাস্তায় টানা কয়েক হেঁটে হেঁটে চললেন মমতা৷
প্রসঙ্গত, হন্টনের জন্য তিনি বরাবরই জনপ্রিয়। তাঁর হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খান পুলিশ-প্রশাসনের তাবড় তাবড় কর্তারাও। মমতা এর আগে নিজেই জানিয়েছিলেন, নিয়মিত, ম২০ কিলোমিটার হাঁটেন তিনি। গতকালের প্রচারপর্বের জেরে সেই হাঁটার পরিমাণ আরও বাড়ল৷ যত বেশি সম্ভব ভোটারের কাছে পৌঁছতে, রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত হেঁটে বেড়ালেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর প্রথম র্যালি ছিল, ঠাকুরপুকুর থ্রি-এ বাসস্ট্যান্ড থেকে তারাতলা। যা ৮.৬ কিমির পথ।
এরপর তাঁর দ্বিতীয় র্যালি হয়, সুকান্ত সেতু থেকে গড়িয়াহাট (৩.৭ কিমি)। আর তৃতীয় র্যালি ছিল বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পদ্মপুকুর, হরিশ মুখার্জি হয়ে গোপালনগর। সবমিলিয়ে রাজ্যে লোকসভা ভোট প্রচারের শেষ দিনের প্রচারেও কুড়ি কিলোমিটারের বেশি হেঁটেছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রসঙ্গত, শুরুটা হয়েছিল পঁচিশে মার্চ থেকে। প্রথম দফার ভোটপ্রচারে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে র্যালি করেছেন মমতা। রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটপর্ব মেটার পর, তাঁর হাঁটার গতি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন মমতা। প্রতিদিন হেঁটেছেনই প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে হেঁটেই ১৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যা তাঁর জনসভার সংখ্যার সমান। শুধু তাই নয়, তিনি যেখানেই গেছেন, দু’হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছেন মানুষ। রাস্তার দু’ধারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন তাঁকে একঝলক দেখার জন্য। কেউ কেউ মমতাকে ছুঁতে ভেঙেছেন নিরাপত্তার ব্যারিকেডও। তবে তাঁদেরও কাছে ডেকে নিয়েছেন তিনি। শপথ করে মানুষকে সঙ্গে নিয়েই স্ব-পথে হেঁটে গিয়েছেন বাংলার ‘পাইড পাইপার’ মমতা।