বিদ্যাসাগর কলেজে গেরুয়া বাহিনীর তান্ডবকে আদতে তৃণমূলের নামে চালানোর জন্য ১৫ ই মে সকালে বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেলের ইন চার্জ, অমিত মালব্য একটি ট্যুইট করেন। সেখানে তিনি বলেন, “তৃণমূলের গুন্ডারা কলেজের মধ্যে তান্ডব করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য”।
মালব্য-এর যে ট্যুইটটি করেন, সেটা অনুসারে জনৈক বিরাজ নারায়ণ রায় দাবী করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন) এই তান্ডবে উস্কানি দেয়। তিনি এও অভিযোগ করেন কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে র্যালি লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে এবং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পাশাপাশি মোটর সাইকেলে আগুন লাগায়।
ঘটনাচক্রে, এই বিরাজ নারায়ণ রায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি সেদিনের পর থেকেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর, এই একই মেসেজ অনেক বিজেপি কর্মীরা নিজেদের লেখা বলে ফেসবুকে পোস্ট করতে শুরু করেন।
এই কথাটি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী খেয়াল করেন। ওঁরা যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যে দাবি করছে সেটা বুঝতে পেরে একজন মজা করে লেখেন “আজ সমস্ত ফেসবুকই বিদ্যাসাগর কলেজের পড়ুয়া”।
বিজেপি যেই দাবিগুলো করেছে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে উঠে এসেছে এমন কয়েকটি তথ্য, যেগুলোয় প্রমাণ হয়েছে যে ওঁরা মমতা ব্যানার্জীর দলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।
প্রথম দাবি : বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রথম ইটটি কলেজের ভেতর থেকে ছোঁড়া হয়।
যদিও এই বিষয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কলেজের বাইরে গেরুয়া রঙের ‘নমো এগেইন’ লেখা টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তিরাই কলেজের ভিতরে পাথর ছোঁড়ে এবং তাঁদের একটি ভিডিও ফুটেজে কাউকে কলেজের ভিতর থেকে পাথর ছুঁড়তে দেখা যায়নি।
এর পাল্টা দিতে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটিকে সত্য প্রমাণ করার জন্য। যদি সেই ভিডিওতে মালব্যর দাবী আদৌ প্রমাণিত হয়নি।
২ নম্বর দাবি : তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বাইকে আগুন লাগিয়েছে
ফেসবুক পোস্টটিতে বিজেপি সদস্যরা এও দাবী করে যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বাইকে আগুন ধরায়। কিন্তু, ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, বিজেপির গেরুয়া বাহিনীই বাইকে আগুন লাগাচ্ছে। ভিডিও ক্লিপ থেকে এটাও প্রমাণিত হয়, এই ঘটনা ঘটে ক্যাম্পাসের বাইরে।
৩ নম্বর দাবি : বিজেপি কর্মীরা কলেজে ঢুকতে পারেনি কারণ কলেজের দরজা বন্ধ ছিল
সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ অভিযোগ করেন, কলেজের প্রধান গেট সেইসময় বন্ধ ছিল। কলেজ গেটে তালা দেওয়া ছিলো। সমস্ত প্রমাণ এটাই বলছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে তৃণমূলের গুন্ডারা।”
যদিও অনলাইনে অনেক ভিডিওতে দেখা গেছে বিজেপি কর্মীরা জোড় করে কলেজের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ‘নমো এগেইন’ টিশার্ট পরিহিত একজনকে দেখা যায় লাঠি দিয়ে বারবার মেরে গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা করছে।
কলেজের ওপর থেকে একটি ভিডিও তোলা হয়। যেখানে তান্ডবের দৃশ্যে দেখা যায়, বিজেপির বেশ কয়েকজন সাপোর্টার কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। এদের মধ্যে অনেকেই বন্ধ গেটে ভাঙচুর চালায় এবং তারপরে কলেজে ঢুকে আক্রমণ করে।
৪ নম্বর দাবি : বিজেপি এও দাবি করেন যে, তাদের কর্মীরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙতে পারেনা কারণ, ঐ মূর্তি তালাবন্ধ ঘরে ক্যাম্পাসের অনেক ভিতরে ছিল, যা লোহার দরজা ও কাঠের দরজা দ্বারা সুরক্ষিত ছিল
এই বিষয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তনদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁদের থেকে জানা যায়, কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একাধিক মূর্তি আছে। যে মূর্তিটি ভাঙা হয়েছে, সেটি কলেজের গেটে ছিল।
অমিত শাহ এর তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোষ্টে বিজেপি সমর্থকদের তরফ থেকে যা দাবি করা হচ্ছে, এবং আইটিসেল এর কর্মী অমিত মালব্য বা বিজেপি নেতা স্বপন দাসগুপ্ত যেগুলো শেয়ার করেন, ফটো বা ভিডিওতে তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং অন্যান্য ভিডিও এবং সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এটাই প্রমাণিত হয় যে, সেদিনের হামলার মূলে ছিলো একমাত্র বিজেপিই।