সূর্য সবে পশ্চিমে হেলেছে। অফিস ফেরত যাত্রীদের বাড়ি যাবার তাড়া নেই। দোকান, ফুটপাথের দোকানিদের ক্যানিং লোকাল ধরার তাড়া নেই। বাড়ির মেয়ে-বউরাও দুপুরের খাবার সেরে নিয়েছেন তাড়াতাড়ি। এত আয়োজন, এত অপেক্ষা সব একজনের জন্য। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাস্তার দু’পাশেই উৎসাহী জনতার ভিড়। দিদি কখন আসবেন, কোন পথে আসবেন, সেই নিয়ে চলছে জল্পনা, আলোচনা। জোড়াফুল পতাকা, প্ল্যাকার্ড নিয়ে রয়েছেন দলীয় কর্মীরা। তাঁদের চিন্তা অন্য। সকালে পরপর দুটো জনসভা, জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত হেঁটে আসার পর আবার সুকান্ত সেতু থেকে গড়িয়াহাট হয়ে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি-ল্যান্সডাউন হাজরা-হরিশ মুখার্জ্জী রোড এই গরমে এত ধকল…দিদির স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁরা চিন্তিত।
স্কুল বাস থেকে নেমেই এক খুদের বায়না, দিদিকে একবার দেখব। খুদের মা প্রথমে গররাজি হলেও পরে ছেলের আবদার মেটাতে তিনিও দাঁড়িয়ে পড়লেন রাস্তায়। সবুজ পাজামা-পাঞ্জাবীতে সকলকে সামলাতে ব্যস্ত তখন দলের তরুনতুর্কিরা। বেলুন-ফ্ল্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কর্মী সমর্থকরা। সেলফিও তুলছেন। আবার নিজেদের মধ্যে নানা আলোচনাও করছেন।
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে পাঁচটা। কোনও এক জাদুমন্ত্রের ছোঁয়ায় সব শান্ত। রাস্তার দুদিকে ব্যারিকেড। পুলিশ কর্তারা বারবার অনুরোধ করতে থাকলেন রেলিংয়ে কেউ চাপ দিয়ে দাঁড়াবেন না। সবাই রাস্তার একদিকে এসে দাঁড়ান। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সুলেখা থেকে শুরু পদযাত্রা। তাই ঠিক কোথায় গেলে দিদিকে সামনে থেকে দেখা যাবে আকুল হয়ে পুলিশকে প্রশ্ন করে চলেছেন অনেকেই।
ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা পঞ্চাশ। তিনি আসলেন। কথা মতো গাড়ি থেকে নামলেন সুলেখার মোড়ে। সেই সাদা শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটি, মুখে শান্তির হাসি, জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন। শুরু হল পদযাত্রা। শব্দব্রক্ষ্ম উঠল আকাশ-বাতাস ভেদ করে, ‘মমতা-মমতা’। দইয়ের ভাঁড় হাতে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে পড়লেন এক কাকিমা। যাদবপুর ৮বি চত্বর-থানা-যোধপুর পার্কে অফিস ফেরত বাঙালি বাড়ি-সংসার ভুলে মমতার দিকে চেয়ে।
ওদিকে মমতা হাঁটতে শুরু করেছেন। পদযাত্রার ফাঁকে সকলের দিকে হাত নাড়ছেন। তার মাঝেই পাশের নেতাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিচ্ছেন। তাঁর হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অনেকেই ছুটলেন। মুঠোফেনে সকলেই বন্দি করে রাখলেন মুহূর্তকে। ওই যে তিনি একবার তাকালেন, হাত নাড়লেন তাতেই তাঁরা খুশি। অসীম উদ্যমে এগিয়ে চলেছেন। দিদি ডেকেছেন বলেই সবাই তাঁকে একবার দেখতে এসেছেন। দোকান ফেলে বেরিয়ে এসেছেন কর্মীরাও। দিদির মিছিল ৮বি পেরোলেই তাঁরা বিক্রি বাটা শুরু করবেন এমনই আশ্বাস দিচ্ছেন ক্রেতাদের। গরম উপেক্ষা করেই কাতারে কাতারে মানুষ এগিয়ে চলেছেন।
মিছিল যত এগিয়েছে ভিড় তত বেড়েছে। ঢাকুরিয়া ব্রিজে মিছিল পৌঁছতেই শাঁখ বাজিয়ে মমতা-মিমিকে বরণ করে নিলেন এলাকাবাসী। চলল স্লোগান। সেই স্লোগানের প্রাধান্য একটাই। বাংলাকে বাঁচান। বাঙালি জাতিসত্তাকে বাঁচান। জোটবদ্ধ হোক বাঙালি।
এই প্রচণ্ড গরমে এত মানুষ। মিছিলে এল জলের পাউচ। গলা ভেজাল সবাই। মমতা কিন্তু এক ঢোঁক জলও খেলেন না। পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘আবেগের নাম মমতা’। এমন জননেত্রী বাংলা আগে দেখেনি। তাই তো জ্বলছে মোদী-শাহরা। বাংলার অগ্নিকন্যার পাশে তামাম দেশ।