কৃষকদের উন্নতির স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তারপরেই বদলে গেছে সবটা। কৃষকদের উন্নতি তো হয়ইনি উল্টে তাঁর আমলেই উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে চাষিদের হাল। প্রচুর কৃষক দারিদ্র্যের চোটে আত্মহত্যা করেছেন। সেইরকমই এক কৃষক সুধাকর ইয়েড়ে। মোদীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে যার স্ত্রী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৮ বছর বয়সে বৈশালীর বিয়ে হয় সুধাকরের সঙ্গে। ছোট মেয়ের জন্মের সময় শারীরিক জটিলতা হয়েছিল বৈশালীর। মেয়ের যখন এক মাস বয়স, তখনই স্বামীকে হারান তিনি। ঋণের জালে জড়িয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন সুধাকর। বৈশালীর কথায়, “বিদর্ভে প্রায় ১৪ হাজার চাষি আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুধাকরও। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ১২,৬০০।”জানালেন, বিদর্ভের আনাচ কানাচে ঘুরলে কানে আসবে নানা কথা। সরকারি পর্যায়ে অনেকবারই প্রমাণের চেষ্টা হয়েছে ঋণের দায়ে নয়, বরং পারিবারিক বিবাদের কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন চাষিরা। তাই সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণও মেলেনি। কিন্তু, বাস্তব ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই কেন্দ্রের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে এবার বৈশালী মহারাষ্ট্রের যবতমল-ওয়াসিম লোকসভা আসন থেকে প্রহার জনশক্তি পার্টির প্রার্থী হিসেবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খরার ফুটিফাটা মাটি। ঝাঁ ঝাঁ রোদে জমিতে গিয়েছিল মানুষটা। অক্টোবরের দুপুরে সূর্য যেন তার সমস্ত আগুন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিদর্ভের মাটিতে। সুস্থ মানুষটা নিথর দেহ ঘাড়ে করে বয়ে এনেছিলেন প্রতিবেশীরা। বিষের জ্বালায় শরীরটা তখন ফ্যাকাসে। ঘোমটার আড়াল থেকে স্বামীর মৃতদেহটা দেখে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন নব বিবাহিতা বৈশালী ইয়েড়ে। চোখে জল নয়, প্রতিশোধের আগুন খেলে গিয়েছিল মনের আনাচ কানাচে। সেই সুযোগ এল ২০১৯-এ। বৈশালী জানাচ্ছেন, “ এই লড়াই তাঁর একার নয়। যাঁদের অবস্থা আমার মত হয়েছে সকলের জন্যেই এই লড়াই। আমাকে দেখে মনে সাহস পাক দুর্ভাগারা, এটাই আমি চাই”।
রোদের তেজে মাটি যখন জ্বলে যায়, ফসল শুকিয়ে আসে তখন চাষিদের মনের অবস্থা কী হয় সেটা রাজনৈতিক নেতারা বুঝবেন না, বৈশালীর কথায় ঝাঁঝ স্পষ্ট। চোখের পাতা ভিজলেও, মহাজনদের পকেট ভরে না। ঋণের বোঝায় তছনছ হয়ে যায় কত সংসার, সে খবর কী রাখেন নেতামন্ত্রীরা? বছর আঠাশের যুবতীর চোখে জল। বললেন, “মোদী বলেছিলেন সব কিছুতে বদল আসবে। কি হল তার? কিছুই তো হয়নি বরং রোজ খারাপ হয়েছে আমাদের হাল। বছরের পর বছর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে।”
যবতলে কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ১৪৮৯ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন এই এলাকায়। স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদবের কথায়, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে পঞ্জাবে প্রচারে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই পর্যন্তই। বিদর্ভে নির্বাচনী প্রচার চললেও, চাষিদের অবস্থা বদলায়নি। মোদীর ব্যর্থতা অকর্মণ্যতার জন্যে যে কত পরিবার কার্যত ভেসে গেছে তার জ্বলন্ত সাক্ষ্য রাখছে বিদর্ভ।
স্বামীকে হারিয়ে ফেলার শূন্য দৃষ্টি আজ আর ২৮ বছরের বৈশালীর চোখে নেই। এখন তিনি বজ্রের মতো কঠোর। লড়ছেন তাঁরই মতো হাজার হাজার স্বামীহারাদের প্রতিনিধি হয়ে। কোনও কিছুতেই আর ভয় পান না দুই সন্তানের মা বৈশালী। বলেছেন, “আমার বিরোধীদের পিছনে ফেলে দেবো আশা রাখি। যদি নাও জিততে পারি না, লড়াইটা বন্ধ করবো না। কারণ আমাকে দেখেই বাকি মহিলারা মনে সাহস পাবে।” মোদীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে তো এমনই দুর্গাদের প্রয়োজন, যারা নিজেদের চোখের জল মুছে লড়ছেন দেশের অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে।