আগামি ১৯ তারিখ শেষ দফার নির্বাচন। সেদিন ভোট দক্ষিণ কলকাতার কেন্দ্রেও। দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় প্রচারের প্রথম দিন থেকেই ঝড় তুলছেন। রোদ উপেক্ষা করেই পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষের কাছে। মালা হয়ে উঠছেন সকলের কাছের, সকলের প্রিয়।
প্রচারে মাঝরাস্তায় দু’জন আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন। বৃদ্ধাদের দেখেই তৃণমূল প্রার্থী নিজের মাথাটিকে ঝুঁকিয়ে দিলেন। তাঁরা প্রার্থীর মাথায় হাত রেখে বললেন, মমতার মতো তুইও আমাদেরই মেয়ে। তুইই জিতবি মা। এরকমই টুকরো টুকরো আবেগের দৃশ্যে ভরে উঠছে মালার প্রচার। গতকাল লর্ডসের মোড় পেরিয়ে তখন হুডখোলা জিপ ঢুকছে বিক্রমগড়ে। চারপাশে মানুষ। কেউ হাত নাড়ছেন, কেউ নমস্কার করছেন। প্রত্যুত্তরে প্রত্যেককে হাতজোড় করে নমস্কার করছেন জিপে দাঁড়িয়ে থাকা কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। তাঁর পিছনে তখন দাঁড়িয়ে কলকাতা পুরসভার দুই মেয়র পরিষদ সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ও রতন দে। পিছন থেকে ভেসে আসছে স্লোগান— ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও’, ‘দুর্নীতির সরকার, আর নেই দরকার।’ সকাল তখন সাড়ে ১০টা। প্রখর তাপদাহে ঘেমেনেয়ে একাকার তৃণমূল প্রার্থী। রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে আবারও সেই হাসিমুখ।
দক্ষিণ কলকাতার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডটি বরবারই তৃণমূলের গড় হিসেবেই পরিচিত। প্রখর গরমে শাসকদলের প্রার্থীকে দেখতে রাস্তার দু’পাশে মানুষের ভিড়। কেউ কেউ আবার আকাশচুম্বী বহুতলের গ্রিলের জানালা থেকে উঁকি দিচ্ছেন। কেউ আবার হাত নেড়ে দিচ্ছেন পাশের থাকা বার্তাও। আচমকাই একটি বাড়ির দোতলায় নজর গেল মালাদেবীর। গলির ভিতরে থামল গাড়ি। বাড়ির দোতলায় থাকা দু’জন মহিলা হাত নাড়ছেন। মালাদেবী ওই মহিলাদের উদ্দেশে হাত নেড়েই বললেন, ফুল ভরে থাকায় আপনাদের গাছটি দেখতে ভালো লাগছে। ওই প্রার্থীর কাছ থেকে এমন কথা শুনে দুই মহিলাও খুশিতে বেশ আপ্লুত হলেন। এরপরই গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। জলের বোতলে চুমুক দিতে দিতে মালাদেবী বললেন, ফুল আমার বরাবরই প্রিয়। আমি আমার ঘরে, বারান্দায় ফুলের গাছ রাখতে খুব ভালোবাসি। সঙ্গে ফল রয়েছে। কিন্তু সেটা খাওয়া হয়ে ওঠে না। সকালে চা-টোস্ট খেয়ে বের হই। তবে দুপুরে গিয়ে বিউলির ডাল দিয়ে ভাত মেখে পোস্তর বড়া খাওয়ার স্বাদই আলাদা। ভেটকি বা পাবদা মাছ ভাজা থাকলে তো আর কথাই নেই, বলে চলেন প্রার্থী।
জিপ বিক্রমগড় হয়ে তখন পোদ্দারনগর পুকুরপাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে মিছিলে কর্মীদের মুখে ক্লান্তিহীন স্লোগান। টানা প্রচারের ধকল রয়েছে। কিন্তু তা বললে তো চলবে না। এখনও অনেক কাজ বাকি। বলেই আবারও তৃণমূল প্রার্থী নমস্কার করতে থাকলেন এলাকার মানুষকে। হালকা রঙের সিল্ক বা তসরের শাড়ি পরতেই পছন্দ মালাদেবীর। আর প্রচারে সেটাই তাঁর পরনে। বললেন, আমি একটু তসরের বা সিল্কের শাড়ি পরতে ভালোবাসি। গরমে সেকারণেই অসুবিধা হয় না। কথা বলতে বলতেই জিপ দাঁড়াল। হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন, আমি আপনাদেরই ঘরের মেয়ে। আপনাদের কাছে আমি আশীর্বাদ চাইছি। বর্তমানে কেন্দ্রে যে মিথ্যাচারের সরকার চলছে, তাকে হটাতে আপনারা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন। বিজেপি সরকার সর্বনাশের সরকার। তখনই পিছন থেকে স্লোগান ভেসে এল, ‘নেই নেই দরকার, বিজেপির সরকার।’ এরই মধ্যে প্রার্থীর সঙ্গে থাকা সবসময়ের কর্মীর কাছে তাঁর স্বামী নির্বেদ রায়ের ফোন। কখন ফিরবে তোমাদের দিদি ঘরে? রোদ ভালো নয়। একটু-আধটু যেন ছায়ায় দাঁড়ায়। যদিও তৃণমূল প্রার্থীর সেদিকে আর নজর নেই। তিনি রয়েছেন নিজ ছন্দে।