তাঁকে কেন জননেত্রী বলা হয়, তা আবারও প্রমাণ করে দিলেন তিনি। ফণীর সামনে যেভাবে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন বাংলার আয়রন লেডি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যবাসী। উল্লেখ্য, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাবরই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর অন্যথা ঘটেনি। তবে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই নন, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনও সে কাজ দৃঢ়তার সঙ্গে সামলেছেন তিনি। এবারও বলতে গেলে, রাজ্যে ঝড়ের প্রবেশদ্বারেই ঘাঁটি গেড়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকেই মমতা রয়েছেন খড়গপুরে। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি বেসরকারি হোটেলে থেকেই ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’-র গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখছিলেন তিনি। টেলিফোন আর টেলিভিশনের পর্দায় নজর তাঁর।
কিন্তু প্রবল দুর্যোগের এই পরিস্থিতিতে কেন খড়গপুরেই ঘাঁটি গেড়ে বসেন মুখ্যমন্ত্রী? এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে তিনি নিজেই জানান, আগামী কয়েকদিনের সভা তো আছেই। তার চেয়েও বড় কথা, ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু উড়িষ্যা হয়ে বাংলায় ঢুকবে, তাই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। খড়গপুর থেকেই সেই এলাকাগুলিতে দ্রুত পদক্ষেপ করা সুবিধাজনক। এখান থেকে উড়িষ্যা মাত্র ৭০ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, চন্দ্রকোনার ক্ষেত্রপালের সভাটি বাতিল হয়েছিল আগেই। ঠিক ছিল, বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার বেলা তিনটের সময় অনুষ্ঠিত হবে তৃণমূল নেত্রীর সেই সমাবেশ। কিন্তু আবহাওয়ার মতিগতি দেখে পরে ঠিক হয়, তিনটের পরিবর্তে সেই সভা হবে বেলা একটায়। অবশ্য সকাল থেকেই মেদিনীপুর জেলা জুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি। সকাল দশটা নাগাদ ঘোষণা করা হয়, বাতিল করা হচ্ছে সভা।
তবে ভোট বিধির কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী জেলা অফিসারদের সঙ্গে দেখা করেননি। কারণ বছর কয়েক আগে খরা পরিস্থিতির মধ্যেই নদীয়ায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সার্কিট হাউসে জেলাশাসককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। খরা পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবগত করতেই তিনি সার্কিট হাউসে গিয়েছিলেন বলে কমিশনকে জানান জেলাশাসক। কিন্তু কমিশন তাঁকে সরিয়ে দেয়। কমিশনের বক্তব্য, ভোটের কাজে যুক্ত কোনও অফিসার এই সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করতে পারবেন না। মমতা অবশ্য হোটেল থেকেই ঘন ঘন মোবাইলে যোগাযোগ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে ফিরহাদের কাছে জানতে চান ভগ্নপ্রায় বাড়ির বাসিন্দাদের সরানো গিয়েছে কি না। মেয়র জানান, বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাড়ি ছাড়তে নারাজ। মুখ্যমন্ত্রী মেয়রকে বলেন, তাদের ভালো করে বোঝাতে। বাড়ি ভেঙে প্রাণহানি আটকাতেই হবে।
গতকাল সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্বেগের কারণ নেই, তবে সতর্ক থাকুন। রাজ্য প্রশাসন সব রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা অবলম্বন করছে। খুব প্রয়োজন না-হলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। আমি এখান থেকেই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি এবং পর্যালোচনা করছি। ফিরহাদ হাকিমকেও (কলকাতার মেয়র) বলেছি, পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে।’ নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মমতা গতকাল বলেন, ‘ফণী সাইক্লোনের কারণে আসন্ন দুর্যোগের জন্য আমি আগামী ৪৮ ঘন্টা আমার সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখলাম। আমরা ২৪X৭ মনিটরিং চালাচ্ছি। সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাছে আমরা সহযোগিতা কামনা করি। আগামী ২ দিন সাবধানে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।’