পূর্বাভাস অনুযায়ী কথা ছিল উড়িষ্যায় তান্ডব চালিয়ে বাংলায় প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় ফণী। বাংলায় ঢুকে দীঘা হয়ে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে কলকাতায় ঢুকবে। কিন্তু এযাত্রায় সুপার সাইক্লোন ফণীর হাত থেকে বরাতজোরে রক্ষা পেয়েছে কলকাতা। ফণী আতঙ্কে শুক্রবার সারারাত কার্যত দুচোখের পাতা এক করেনি শহরবাসী।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার মধ্যরাতে ১২.৩০ মিনিটে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে ফণি। রাত ১.৩০ মিনিটে তার অবস্থান ছিল কলকাতা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের পর ব্যাপক শক্তিক্ষয় হতে থাকে তার। খড়গপুর, হুগলি, হাওড়া হয়ে মুর্শিদাবাদ-নদিয়ার দিকে অগ্রসর হয় ফণী। কলকাতার কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়।
যে প্রশ্নটা সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল কেন মহানগরীতে বিষদাঁত ফোটাতে পারল না ফণী? যার পিছনে মূলত ৪টি কারণকে তুলে ধরেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
১) লাগাতার গরম- কলকাতায় গত কয়েকদিন ধরে অত্যধিক গরম ছিল। এপ্রিলের শেষেই পারদ ৩৭ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলে। লাগাতার গরম চলছিল।
২) দূষণ- নির্বিচারে গাছ কাটা, বহুতল, অত্যধিক যান চলাচল, কলকাতায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণ। ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে।
তিন গুণ তাপ- কলকাতা বিগত কয়েকদিন ধরে কার্যত তপ্ত কড়াইতে পরিণত হয়েছিল। তেতে ছিল কলকাতা। গত কয়েকদিন ধরে তিন গুণ বেশি তাপ ছিল মহানগরীতে।
৪) ছোট নাগপুর মালভূমির নিম্নচাপ- একদিকে ফণি যখন বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে বাংলার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, ঠিক তখনই অন্যদিকে আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হয়ে গিয়েছে ছোট নাগপুর মালভূমিতে।
এই সমস্ত কারণে বাংলায় ঢোকার পর দ্রুত শক্তিক্ষয় করতে থাকে ফণী। একদিক থেকে শুষ্ক তাপের ঠেলা, অন্যদিক থেকে নিম্নচাপের টান। যার জেরে উলম্বভাবে সরতে থাকে ঝড়। আজ সকাল ৭.৩০ মিনিটে আলিপুর আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, ঘূর্ণিঝড় ফণির জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে আর কোনও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।