ঘড়িতে সময় যত এগচ্ছে, হাওয়ার গতিবেগও ক্রমশ বাড়ছে। সমুদ্রের জল আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে। ‘অতি শক্তিশালী প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ ফণী আছড়ে পড়ার জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে। গত ৪৩ বছরের মধ্যে সবথেকে ভয়ঙ্কর ঝড় হিসাবে আছড়ে পড়তে চলেছে ফণী।
ফণীর মোকাবিলায় তৈরী কলকাতাও। ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসন। পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিকাশি, জল সরবরাহ, জঞ্জাল অপসারণ, আলো এবং পার্ক ও উদ্যান দফতরের কর্মীদের যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী মজুত করতে বলা হয়েছে পুরসভার সচিবের দফতরকে।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ইতিমধ্যেই পুর ভবনের কন্ট্রোল রুমকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সাইক্লোনের সময়ে তিনি পুর ভবনের কন্ট্রোল রুমে হাজির থাকবেন। মেয়র জানান, শহরের প্রতিটি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন ঠিকঠাক আছে কি না, সেটাও এখনই দেখে নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন মতো পাম্পের ব্যবস্থা রাখতে। যদি ভাড়া করতে হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। কিন্তু শহরে যাতে জল না জমে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গঙ্গার ধারের লকগেটগুলিতেও নজর রাখতে বলা হয়েছে নিকাশি দফতরকে।
এমনিতেই ভোটের মরসুম বলে প্রশাসনের চিন্তা রয়েছে। তার উপরে ‘ফণী’র প্রভাবে শহর বেসামাল হলে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা পুরকর্তাদের। এ দিন পুর কমিশনার জানান, ‘ফণী’র জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে সিইএসসি-কে। বুধবার মে দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকলেও পুর ভবনে একাধিক বৈঠক করেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। প্রায় সব ক’টি দফতরের ডিজি ও পদস্থ আধিকারিকেরা হাজির ছিলেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, ঝড়ে বাড়ি বা গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য তৈরি থাকবে পুরসভার বিল্ডিং দফতর ও গাছ কাটার দল। ঝড়ের দাপটে বাতিস্তম্ভ পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আলো দফতরের কর্মীরা যাতে সেখানে পৌঁছে যান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পুর কমিশনার আরও জানান, পুর ভবন এবং বরো অফিসগুলিতে খাবার, পোশাক, ত্রিপল, পানীয় জলের বোতল-সহ ত্রাণসামগ্রী মজুত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে লঙ্গরখানা খোলার ব্যবস্থাও থাকছে। ঝড়বৃষ্টিতে এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্কুল, অতিথি আবাস এবং কমিউনিটি হল প্রস্তুত রাখছে পুরসভা। ইতিমধ্যে আগামীকাল থেকে স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যে আজকের মধ্যে সমস্ত পর্যটকদের হোটেল ছেড়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। বাঙালি পর্যটকদের জন্য পুরী-কলকাতা বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে ওড়িশা সরকার। ১০৩ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পুরী, কেন্দ্রাপড়া, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, গজপতি, কটক, জাজপুর-সহ আট লক্ষেরও বেশি মানুষকে ওড়িশা উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৮৭৯-এরও বেশি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের এই সাইক্লোন সেন্টারেই আপাতত রাখা হয়েছে।