সাদা ধবধবে একটি তিমি। তিমির গলায় বেল্ট, হাবভাবও বেশ সন্দেহজনক। তবে তিমির গলায় যে বেল্ট রয়েছে তাতে ফিট করা আছে ক্যামেরা-সহ অনেক জিনিষ। নরওয়ে উপকূলে প্রথম তিমিটিকে দেখতে পেয়েছিল এক মৎস্যজীবী। সন্দেহজনক মনে হলে, জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিমিটাকে সাপটে ধরতে গিয়ে আরও অবাক আশ্চর্যের বিষয় হয়। মৎস্যজীবীর উদ্দেশ্য আগে থেকেই কী ভাবে যেন টের পেয়ে গিয়েছিল বিশাল তিমিটা। তাঁকে জলে ঝাঁপাতে দেখে নিমেষের মধ্যে সেটা উধাও হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি সেই ব্যক্তি।
দিনকয়েক আগে নরওয়ে উপকূলে ঘটে যাওয়া এই তিমি-কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে নরওয়ে প্রশাসন থেকে বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, নরওয়ে উপকূলে নজরদারি চালানোর জন্যই ওই তিমির আগমন। বেলুগা গোত্রের ওই তিমি কোনও সাধারণ তিমি নয়। রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া সমঝদার তিমি সেটি। তার গলায় পরানো রেডিও কলার। গুপ্তচরবৃত্তি করাই তার কাজ। সেই মৎস্যজীবী জানান, “আমি যখন প্রথম তিমিটাকে দেখি সেটি উপকূলের কাছে সমুদ্রে একবার ভেসে উঠছিল, পরক্ষণেই ডুব দিচ্ছিল। তার গলায় পরানো বেল্টের মতো জিনিস থেকে যান্ত্রিক শব্দ বার হচ্ছিল। দেখেই আমার সন্দেহ হয়, সেটির পিছু নেওয়ার চেষ্টা করি”। তিমি তাঁর নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পরই তিনি খবর দেন নরওয়ের ফিশারি অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানে থেকে খবর যায় উপকূলরক্ষিবাহিনী ও মৎস্যবিজ্ঞানীদের কাছে।
নরওয়ের নৌবাহিনী থেকে ফিশারি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা হন্যে হয়ে তিমিটাকে খুঁজে চলেছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, রাশিয়ার নৌবাহিনী সেটিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মেরিন বায়োলজিস্ট জর্জেন রি উইগ জানিয়েছেন, “তিমিটাকে আরও দু’একবার দেখা গেছে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে সেটা জলে ভেসে-ডুবে খেলা করছে। আসলে মোটেও তা নয়। এইভাবে চারদিকে সতর্ক নজর রাখছে সে। আর তার চারপাশের ঘটনা রেকর্ড করছে তার বেল্টে লাগানো ভিডিও ক্যামেরায়। উইগ জানিয়েছেন, বেল্টটি বিশেষ ভাবে তৈরি করেছেন নৌবাহিনীর অফিসাররা। তার প্রতিটি কোণায় লাগানো গোপ্রো ক্যামেরা। মেরিন বায়োলজিস্ট উইগের কথায়, “আমার বিশ্বাস এই তিমিটিকেও ট্রেনিং দিচ্ছে রাশিয়ার নৌসেনারা। যদিও রাশিয়া এই বিষয়টা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।”
সামুদ্রিক প্রাণীকে সেনা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ১৯৬০ সালে ‘ডলফিন রিসার্চ প্রোগ্রাম’ শুরু করে মার্কিন নৌবাহিনী। প্রশিক্ষণ দেওয়া ডলফিনগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হত ভিয়েতনাম, রাশিয়ার উপকূলে। সেখানকার নৌবাহিনীর হালহকিকত ধরা পড়তে তাদের সঙ্গে ফিট করা বিশেষ ভিডিও ক্যামেরায়। ২০১২ সালে একই ভাবে ডলফিনদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে ইউক্রেনের নৌসেনারা।