হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শিবপুর, চ্যাটার্জী পাড়ার ব্যাঁটরা সম্মিলনী মাঠে জনসভা করেন তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পুরুলিয়ায় সভা করে তারপর হাওড়ায় জনসভা করেন। এরপরে মেটিয়াবুরুজের পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। এদিন মঞ্চে থাকা সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভায় বক্তৃতা শুরু করেন। প্রতিটি সভার মতই আজকের সভায় রোদ উপেক্ষা করে যারা এসেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, এই গরমে কেউ রাজনৈতিক বকৃতা শুনতে আসেননা। যারা এসেছেন তাঁরা তৃণমূলকে ভালোবেসে, মা-মাটি-মানুষে ভরসা করে, বাংলার মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকবার বার্তা দিতে এসেছেন।
দেশের মানুষ মোদীর ভাঁওতাবাজিতে তিতিবিরক্ত। হাজার একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটাও পূরণ করতে পারেননি মোদী। চৌকিদার বার্তা দিয়েছিলেন, তিনি দেশের প্রতি সজাগ কিন্তু তা সত্ত্বেও নীরব মোদী পালালেন। বছরে ২ কোটি মানে পাঁচ বছরে ১০ কোটি মানুষের চাকরির কথা হলেও দেশে বিগত ৫ বছরে কেবল বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে। মোদী খোঁজ রাখেননি। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গরুর জন্য খরচা করছেন ৭০০ কোটি এদিকে দেশের মা-বোনেদের জন্য খরচা করছেন ১০০ কোটি। ‘বেটি বাচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পে।
দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো বশ্যতা স্বীকার করেছে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করেননি। দেশে কেবল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই পারে মোদীকে দিল্লীর গদি থেকে উৎখাত করতে। বাংলার মানুষই পারে মোদীর বিদায় ঘন্টা বাজাতে। বাংলার মানুষ বোকা নন। তাঁরা রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট অবগত। তাঁরা জানেন, কারা ভাওতা দিচ্ছে আর কারা সত্যিই মানুষের জন্য লড়ছে।
অভিষেক বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘গলায় গামছা, মুখে রাম, দিনে তেরঙ্গা, রাতে দাঙ্গা’। এনারা মানুষের কোনও উন্নতি করতে পারেনা। দিনরাত জয় শ্রী রাম করেন কিন্তু পনেরো লক্ষ টাকা দেন নি। দু,কোটি বেকারকে বছরে চাকরি দেবেন বলেছিলেন মোদী, তাও দেননি। বরং বেড়েছে বেকারত্ব। মানুষের মুখে ভাত জুটছে না, এদিকে দেশের মানুষের টাকা নিয়ে নীরব মোদী পালালেন, খোঁজ নিলেন না মোদী। মুখে শান্তির কথা বললেও দাঙ্গায় বিশ্বাসী, মানুষের সঙ্গে মানুষের দাঙ্গায় বিশ্বাসী। জাত ধর্ম নিয়ে মানুষের বিভেদ করে ভোট আদায়ের জন্য। ভারতের মত ধর্ম নিরপেক্ষ গণতন্ত্র দেশে এবিষয় লজ্জাজনক।
এদিনের সভা থেকে অভিষেক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, দেশের সর্বনাশের জন্য মোদী দায়ী। দেশের আর সর্বনাশ হতে দেবেননা। মোদীকে ভোট দিয়ে আরো অনেক দিন আপনাদের ভাঁওতা সহ্য করতে হবে। চৌকিদারের দেশে পারবেন না শান্তিতে ঘুমোতে। শান্তির বাতাবরণ পছন্দ হলে মমতার সরকারকে ভোট দিয়ে মমতাকে দেশনেত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করুন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী নিজে শান্তি প্রিয় মানুষ, এবং বাংলার মানুষের জন্য যথেষ্ট ভাবেন। মানুষের জন্য দিনরাত পাত করেন। তৃণমূল সরকার ধর্ম নিয়ে মানুষে ভাগ করেন না। জাতপাতের রাজনীতি নেই বাংলায়। তার কাছে সকল মানুষ সমান। আর তাই ধর্মনিরপেক্ষ বাংলা গড়ে তুলতে হলে জোড়া ফুলে ভোট দিন।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতিভ্রম হওয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন অভিষেক এই সভা থেকে। তিনি জানান, দেশের প্রধানমন্ত্রী গরুকে নিয়ে প্রকল্পে খরচা করছেন সাড়ে সাতশো কোটি। এদিকে দেশের মানুষের উন্নয়নে অর্থাৎ দেশের মা বোনেদের জন্য খরচা করেছেন ১০০ কোটি। এবার আপনারা ভাবুন কাকে ভোট দেবেন। রাম মন্দির গড়বেন, হিন্দুদের সুযোগ বেশি দেবেন। মুসলিম হলে দেশ থেকে তাড়াবেন, এটা কোন নীতি? আরএসএস বাংলায় এলে বাঙালিদের সমস্যার কথাও জানান অভিষেক। তিনি বারবার সাধারণ মানুষদের জানান, ভেবে ভোট দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ভোট দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী বাংলার সাধারণ গরীব মানুষের জন্য নানা প্রকল্প নিয়েছেন। কন্যাশ্রী থেকে সবুথসাথী, যুবশ্রী থেকে সমব্যথী, রূপশ্রী প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী যে উন্নয়ন করেছেন কেউ কোথাও সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এত কিছু করেন না বলে জানান অভিষেক। এমনকি কন্যাশ্রী প্রকল্প যে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছে সে কথাও জানান।
বাংলার উন্নয়ন মানুষ চোখে দেখতে পায়। মোদীর উন্নয়ন দুরদুরান্তেও দেখা যায় না। বাংলায় বিশ্ববাংলা গেট, দক্ষিণেশ্বরে স্কাই-ওয়াক থেকে দীঘায় উন্নয়নে মানুষের নজরে পড়ছে। মোদীর উন্নয়ন মানুষ দেখে না। মোদী ভারতীয় সেনাকে নিয়ে রাজনীতি করে। এমন প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য লজ্জাজনক। এবার আগামী ২৩ মে আপনারা মোদীকে বিতাড়িত করুন। দেশে শান্তি আনুন।