আজ উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শ্যামপুর ফুটবল ময়দানে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভাতেও মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনই। বক্তব্যের প্রথমেই সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এই সভা ছিল উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের প্রার্থী সাজদা আহমেদের সমর্থনে।
সভামঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘এই চড়া রোদ উপেক্ষা করেও যে এত মানুষ এসেছেন আমি তাতে আপ্লুত। আরও মানুষ আছেন কিন্তু তাঁরা রাস্তায়। আজ মাঠ ছোট বলে আমরা সবার জায়গা করে উঠতে পারিনি আমি তাঁর জন্যে দুঃখিত।কিন্তু নির্বাচনী জনসভা দুপুরেই হয়, অনেকে বাড়ি থেকে ২ ঘন্টা আগে থেকে বেরোয়, আজ অনেক মহিলা এসেছেন সংসারের কাজ সামলে আমি কৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে। আমি জানি আজ যারা এসেছেন তাঁরা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য শুনতে আসেননি তাঁরা এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছেন আগামী ৬মে বিজেপিকে দেশছাড়া করবেন”।
এরপরে তিনি বলেন, ““২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তোমরা যত বাংলাকে আঘাত করবে আমাদের যা প্রতিবাদ করার করব কিন্তু মাথা নত করব না”।
অভিষেক আরও জানান, “ আজকের বিপুল জনজোয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছে মানুষ আছে তৃণমূলের পাশেই। আমি এই আবেদনই করতে চাই গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি লিডে আমাদের প্রার্থীকে জেতান। এমন ভাবে জেতান যাতে আর কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। মোদী পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন আচ্ছে দিন আসবে, কিন্তু এখানে কেউ বলতে পারবে না যে আচ্ছে দিন এসেছে। আচ্ছে দিনের নামে যদি কারোর লাভ হয়ে থাকে তা শুধুমাত্র মোদীর।আচ্ছে দিনের মোদী নিজের আখের গুছিয়েছেন। ওনার কথা মত আপনাদের কারোর ব্যাঙ্কেই ১৫ লক্ষ টাকা ঢোকেনি তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথা মত কন্যাশ্রী রূপশ্রী ইত্যাদি সব কিছু দিয়েছেন মানুশ আরও সমৃদ্ধ হয়েছেন। রাস্তাঘাট, আইআইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলো ইত্যাদি সব দিয়েছে ত্রিনমুল।কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি পাঁচ বছর ধরে মানুষকে বোকা বানিয়ে রেখে গেছে”।
মোদীকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, ‘মোদী নিজেকে চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি,আজ উনি বলেন উনি চৌকিদার কিন্তু কখনও ওনাকে লাঠি হাতে পাহার দিতে দেখিনি। এমনই চৌকিদার উনি যে, নীরব মোদীরা সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালায়। কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। ওনার কাছে মানুষের উন্নয়নের জন্যে টাকা নেই কিন্তু নিজের জন্যে আছে তাই দিল্লীতে সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরী হয়।
এরপরে অভিষেক বলেন, “ অমিত শাহ কিছুদিন আগেই এখানে সভা করে গেছেন, মাঠের কি অবস্থা ছিল আমরা জানি, অর্ধেক মাঠও ভরেনি। আর আজ দেখুন মানুষ নিজের ইচ্ছায় এই রোদ উপেক্ষা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে এসেছেন। ওরা শুধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। কিন্তু এমনই হিন্দুত্ব যে ওরা বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি এখানে দুর্গাপুজো করতে দেয় নি। মিথ্যাবাদীদের লজ্জা থাকা উচিত। আমরাই ২৮ হাজার ক্লাবকে পুজোর জন্যে অনুদান দিয়েছি”।
বিজেপির হিন্দুদের নিয়ে এই বিভাজনকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “ রামনামেও ওরা আর বাঁচতে পারবে না। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই ওদের একমাত্র কাম। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? আর আমি বলছি জয় শ্রী রাম, ২৩ মে-র পর ভারতীয় জনতা পার্টির থাকবে না কোনও নাম। ওরা সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে লড়ে আর আমরা মানুষের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ সততা উন্নয়ন দিয়ে লড়ি”।
অভিষেক আরও জানান, “ আমরা যাদের ডাস্টবিনে ফেলে দিই, বিজেপি তাঁদের কুড়িয়ে নেয়। ওদের এতটাই দুরবস্থা যে পতাকা লাগানোর লোক অবধি পাওয়া যায় না। মিথ্যাকথা দিয়ে আর মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।আমরা যা কাজ করেছি বিজেপি তার ধারে কাছে নেই।
আজকের সভায় মানুষের উছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত। অভিষেক বলেন, “ ওরা মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল এবার আর সেই ভাঁওতাবাজি চলবে না । ২৩ তারিখে বাংলা এবং দেশ তৃণমূলময় হয়ে যাবে”। এরপরে মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এর আগের গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা আজকে দাম হয়েছে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটাই আচ্ছে দিন”। এরসঙ্গেই পেট্রল-সহ নানা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ ঠিক ভোটের আগেই কমল সব কিছুর দাম কারণ বিজেপি ভয় পেয়েছে। সব সমীক্ষা দেখিয়েছে আগামী দিনে ওরা গো-হারা হারছে। ওরা যত হারবে তত সবকিছুর দাম কমবে”।
বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।