লোকসভা ভোটের তিন দফা হয়ে গিয়েছে। তিনশোর বেশি আসনে ভোট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। গোটা দেশের কোথাও মোদীর পক্ষে আগের মতো হাওয়া নেই। এখন তাই প্রধানমন্ত্রীকে নব নব রূপে মেলে ধরতেই ব্যস্ত গোটা বিজেপি শিবির। যেমনটি হল বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়ানো হল। বলা হল, গোটা সাক্ষাৎকারই ‘অরাজনৈতিক’। যদিও তার পরতে পরতে রাজনীতিই গুঁজে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
যা দেখে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, ‘বাস্তবের সামনে অভিনয় চলে না। জনতার সামনে চৌকিদারের ছলচাতুরি (মক্কারি) চলে না। চৌকিদার চোর হ্যায়।’ জনসভায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাও বলেন, ‘বড় বড় অভিনেতাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নিজের কেন্দ্রের গরিব লোকেদের সঙ্গে দেখা করার সময় নেই তাঁর।’ আর দিল্লীতে কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘এক জন ব্যর্থ নেতা অক্ষয় কুমারের মতো অভিনেতাকেও টক্কর দিতে চাইছেন। পারবেন না। বোধ হয় ২৩ মে-র পর বলিউডে বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী।’
কিন্তু বিজেপি সূত্র অস্বীকার করছে না, অক্ষয়কে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকার আসলে ভোটের মধ্যগগনে নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তিতে চমক আনার চেষ্টা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বাইরে তাঁর ভাবমূর্তি যতই কঠোর হোক, আসলে তিনি কখনও রাগেন না। আবার আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপেও বিশ্বাস করেন না। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে মেহনত করেন, বাকিদেরও পরিশ্রম করাতে চান। বারাক ওবামা দেখা হলেই তাঁর কম ঘুম নিয়ে উদ্বেগ জানান।
সেই প্রসঙ্গে মোদী এমনও বলেন যে ওবামার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ‘তুই-তোকারির’। ‘দেখা হলেই বলে, তুই এমন কেন করিস। আসলে এটা তোর কাজের নেশা।…. এতে নিজেরই ক্ষতি করছিস।’ ‘সাজানো’ এবং ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকারে অক্ষয়ের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না, মোদীকে তুই-তোকারি কি ওবামা ইংরেজিতে করেন? ভাষণের গোড়ায় বলা নমস্তে, ধন্যবাদ, জয় হিন্দের মতো রপ্ত করে আসা শব্দের বাইরে ওবামা কি আদৌ হিন্দিতে কিছু বলতে পারেন?
এরপর মোদী জানান, অবসর নিলেও মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। তবে অবসরের পরে তার প্রথম চেষ্টা হবে, ঘুম কী ভাবে বাড়ানো যায়। অক্ষয় ধরতাই দিয়েছিলেন, তাঁর ও মোদীর, দু’জনেরই কোনও গডফাদার বা বিশেষ কোনও পরিবারের উত্তরাধিকার ছিল না। কখনও ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী হবেন? পরিবারতন্ত্রের মতো প্রিয় বিষয়ে অনায়াস গতি মোদীর। কথায় কথায় শোনান, ছোটবেলায় তাঁর দারিদ্রের জীবন। জানালেন, চা বেচতে বেচতেই ভাল হিন্দি বলতে শিখেছেন। কখনও ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী হবেন ইত্যাদি।
মায়ের প্রশ্নটা বারবারই তোলে কংগ্রেস। অক্ষয়ও করেছিলেন। তাঁকে হতাশ করে মোদীর জবাব, ছোটবেলায় গৃহত্যাগ করেছেন বলেই মাকে নিজের সঙ্গে রাখেন না। তাঁকে আর্থিক সাহায্যও করেন না। উল্টে মায়ের সঙ্গে দেখা হলে তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে কিছু টাকা দেন। স্বাভাবিকভাবেই এ কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, যখন প্রয়োজন হয়, তখন মাকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেন প্রধানমন্ত্রী। তা সে ভোট দেওয়ার সময় হোক কিংবা নোটবন্দীর সময় বৃদ্ধা মাকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করানো।
মোদী ওই ভিডিও সাক্ষাতকারে এ-ও বলেন যে, ‘একবার প্রধানমন্ত্রী নিবাসে মাকে এনে রেখেছিলাম। কিন্তু নিজের ব্যস্ততার কারণে বেশি সময় দিতে পারিনি। মায়েরও এখানে মন বসেনি।’ ভোট প্রচারে ফের এভাবে মা-কে ব্যবহার করাটাকে বিরোধীদের পাশাপাশি দেশবাসীও যে বীতশ্রদ্ধ তার প্রমাণ মিলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্যে। এ নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড়ছেন না নেটিজেনরা।