ভোটের শেষে ভরা বর্ষায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার ছ’টি ব্লকে যদি দেখেন, যত্রতত্র মাথা তুলছে সবুজ সূর্যমুখী চারা, অবাক হবেন না। কারণ ভোটের কল্যাণে এবার পুরুলিয়ায় রুঘুনাথপুরের ছয়টি ব্লকে ফুটতে পারে সূর্যমূখী। নির্বাচনের সঙ্গে হিংসা, উত্তেজনা, টানাপোড়েন, হানাহানি এসবের যোগ থাকলেও ভোটের সঙ্গে ফুলের যোগটা ঠিক মাথায় আসছে না তো? এর জবাব আছে রঘুনাথপুরের প্রশাসনের কাছে।
এ বার রঘুনাথপুরের ছ’টি ব্লকে ভোটে এক বিশেষ ধরনের কাগজের কলম ব্যবহার করা হচ্ছে। কাগজের তৈরি সেই কলমের মাধ্যমে ফুটবে ফুল। কলমটির বিশেষত্ব, প্রতিটি কলমে একটি করে বীজ ভরা থাকে। ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার পর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বীজগুলি থেকে গাছ জন্মাবে। অর্থাৎ, ফুল ফুটবে ভোটের কাজে ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া কলম থেকে। পুরুলিয়ায় ছ’টি ব্লকের প্রতিটি বুথে পরিবেশবান্ধব কাগজের কলমটি ব্যবহার করা হবে। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন।
এটা শুধু কাগজের কলম নয়, বীজ কলমও বটে। কলমের মধ্যেই থাকবে গাছের বীজ। পেনের ব্যবহার শেষ হলে তা ফেলে দিএ সঠিক আলো, বাতাস পেলেই তা চারা গাছে রূপান্তরিত হবে। এবার তেমন পেনই নির্বাচনে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন মহকুমাশাসক। তিনি জানান, “রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এই তিন কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ৮১১। এছাড়া রয়েছে ডিসিআরসি। বুথপিছু দু’টি এবং ডিসিআরসি কেন্দ্র ধরে আড়াই হাজার কলমের বরাত প্রস্তুতকারক স্বনির্ভর দলগুলিকে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন”। মৌমিতা মাহাতো জানান, “কলমগুলি তৈরি হবে তেরঙা কাগজ দিয়ে। থাকবে নির্বাচন কমিশনের লোগো। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোট মিটলে এই কাগুজে কলম ছড়িয়ে দেওয়া হবে মাঠে”।
এই কাগজের কলম প্রথম তৈরি হয় কেরালায়। সেখানে লক্ষ্মী মেনন নামে এক মহিলা সম্পূর্ণ কাগজ দিয়ে এমন কলম তৈরি করেন। সেই দেখে পুরুলিয়ায় কলমটি তৈরি করেন স্বনির্ভর দলের মহিলাদের প্রশিক্ষক শম্পা রক্ষিত সেন। শহরের শিল্পমেলায় শম্পার তৈরি কলম দেখে বিষয়টি রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসককে জানান পাড়া ব্লকের এনআরএলএম-এর প্রকল্প ম্যানেজার মৌমিতা মাহাতো। মহকুমাশাসকের পছন্দ হয় বিষয়টি। তাঁর উৎসাহে মৌমিতা পাড়া ব্লকের স্বনির্ভর দলের মহিলাদের দিয়ে কলম তৈরি শুরু করেন। বাজার থেকে কেনা রিফিলের উপর রঙিন কাগজের আবরণ দিয়ে কলম তৈরি হয়। কলমের ঢাকনিও হয় কাগজ দিয়ে। প্রকল্পটি দেখে খুশি হন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।